ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শিশু আলিফ হত্যাচেষ্টা: নেপথ্যে বড় মামি-ছোট মামার পরকীয়া!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
শিশু আলিফ হত্যাচেষ্টা: নেপথ্যে বড় মামি-ছোট মামার পরকীয়া! বামে শিশু ফারহান ডানে মামা-মামি

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় শিশু আলিফ ফারহানকে (৬) নৃশংসভাবে দুই চোখ, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুচিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ভিকটিমের বড় মামি রানী খাতুনকে (২২) গ্রেফতারের পর ছোট মামা আশিকুজ্জামান ইমনকেও (১৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

লোমহর্ষক এ ঘটনার পরপরই ভিকটিমের বাবা মহিউদ্দীন বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় মামলা (নং-০৪/২৮) দায়ের করলে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের দিক নির্দেশনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনার রহস্যভেদ করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

একইসঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত শিশু ফারহানের বড় মামি রানী খাতুন ও ছোট মামা আশিকুজ্জামান ইমনকে গ্রেফতার এবং এ ঘটনায় ব্যবহৃত চাকু এবং আসামির রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

গ্রেফতার রানী ও ইমন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন উল্লেখ করে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ মঙ্গলবার রাতে এক প্রেসনোটে জানান, শিশু ফারহানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান ও দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আহমেদের নেতৃত্বে তদন্ত এবং সাড়াশি অভিযানে নামে পুলিশ। শুরুর দিকে ঘটনার পুরো দায় শিশুটির বড় মামি রানীর ওপর চাপিয়ে দেয় ভিকটিমের পরিবার। তাৎক্ষণিক রানী খাতুনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়া হলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরে রাতেই শিশুটির ছোট মামা আশিকুজ্জামান ইমনকেও গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়া হলে লোমহর্ষক ঘটনার রহস্যভেদ হয়।

ওসি ওবায়দুল্লাহ জানান, মা মারা যাওয়ার পর থেকে নানা বাড়িতেই থাকতো শিশু আলিফ। বড় মামি রানীকে মা বলে ডাকতো সে। তার বড় মামা কাজের সুবাদে বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ই যশোরে থাকেন। এরই মধ্যে মামির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ফারহানের ছোট মামা ইমন।

সোমবার দুপুরে রানী ও ইমনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে ফারহান। সেসময় বাড়িতে ছিলেন না শিশুটির নানা ও নানি। একপর্যায়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে রানীর সহায়তায় ছোটমামা ইমন প্রথমে আলিফকে ঘরের ভেতরে ডেকে নিয়ে দুই হাত বেঁধে ফেলে। তারপর ইমন ধারালো চাকু দিয়ে নৃশংসভাবে শিশুটির দুই চোখ খুচিয়ে রক্তাক্ত করে দেয় এবং মুখমণ্ডল, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে। একপর্যায়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে গেলে সুযোগ বুঝে তাকে মরিচ্চাপ নদীর পার্শ্ববর্তী একটি গর্তে ফেলে আসে আশিকুজ্জামান ইমন। বাড়িতে ফিরে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত চাকু এবং রানীর রক্তমাখা সালোয়ার লুকিয়ে ফেলে ইমন। তাছাড়া ঘরের মেঝে থেকে রক্তের দাগও মুছে ফেলে তারা। এর কিছুক্ষণ পর কৌতূহলবশত ইমন ফের শিশুটিকে ফেলে আসা গর্তের কাছে যায় এবং কেউ তার ভাগ্নেকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বলে নাটকীয়ভাবে চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে। পরে স্থানীয়রা শিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। শিশুটিকে হত্যাচেষ্টার পর তার ছোটমামা ইমন অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে ভালো মানুষের অভিনয় করে আসছিল, যাতে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয় এবং পুরো ঘটনার দায় কেবলমাত্র রানীর ঘাড়ে চাপে।

গ্রেফতার রানী ও ইমন মঙ্গলবার দুপুরে এভাবেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে লোমহর্ষক এই ঘটনার বর্ণনা দেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয় বলেও জানিয়েছেন ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ।

এদিকে সোমবার দুপুরে মরিচ্চাপ নদীর পার্শ্ববর্তী একটি গর্ত থেকে শিশু আলিফ ফারহানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর তাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। কিন্তু সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে এবং শিশু ফারহানের দুটি চোখে জরুরি অস্ত্রপচারের জন্য পরবর্তীতে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশু ফারহান।

জাতীয় চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ভিকটিমের স্বজনরা জানিয়েছে, ধারালো ছুরি দিয়ে খোচানোর কারণে ফারহানের ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে এবং বাম চোখটিতে অস্ত্রপচার সম্পন্ন হয়েছে। তাকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখা হয়েছে, নির্ধারিত সময় শেষে বাম চোখটি ভালো হবে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারবেন চিকিৎসকরা।  

**শিশু আলিফকে নির্যাতনের ঘটনায় মামি গ্রেফতার
**সাতক্ষীরায় নদীর পাড় থেকে ক্ষত-বিক্ষত শিশু উদ্ধার 


বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।