ঢাকা, শনিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুলনার জন্মদিন আজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
খুলনার জন্মদিন আজ

খুলনা: হযরত খানজাহান আলী (রহঃ)-এর পবিত্র পদচারণা-ধন্য, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা খুলনার ১৪০তম জন্মদিন সোমবার (২৫ এপ্রিল)।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের খুলনার জন্মদিন উদযাপনে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে সকাল দশটায় শিববাড়ির মোড় থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বঙ্গোপসাগরের কূলজুড়ে বিভাগীয় শহর খুলনার অবস্থান। নদ-নদী বিধৌত হযরত খানজাহান আলীর (রহ.) -এর স্মৃতি বিজড়িত শহর, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা অপরূপ এ জেলাটি লম্বা আকৃতির ও চৌকা ধরনের।

খুলনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৮৪২ সালে ভৈরব-রূপসা বিধৌত পুণ্যভূমি নয়াবাদ থানা ও কিসমত খুলনা মৌজাকে কেন্দ্র করে নতুন জেলার সদরদপ্তর স্থাপিত হয় খুলনায়। খুলনা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্রিটিশদের প্রশাসনিক এলাকা বৃদ্ধি এবং ভৌগোলিক অবস্থার কারণে খুলনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাত্র ৪০ বছরের ব্যবধানে ৪ হাজার ৬৩০ বর্গমাইল এলাকা, ৪৩ হাজার ৫০০ জনসংখ্যা অধ্যুষিত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাকে নিয়ে ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুলনার ১৪০ তম জন্মদিন আজ। এর আগে খুলনা ছিল যশোর জেলার মহকুমা। ব্রিটিশ শাসক ডাব্লিউ এম ক্লে জেলার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

খুলনার নামকরণ: কোনো স্থানের ইতিহাস ঐতিহ্য অনুধাবনের ক্ষেত্রে নামকরণের তাৎপর্য নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ। খুলনা তার ব্যতিক্রম নয়। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. সুকুমার সেনের মতে খুলনা এসেছে ‘খুল্লনা’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ক্ষুদ্র নৌকা ভাসে এমন স্থান। এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মতে অনেক কিংবদন্তীর কথা প্রচলিত আছে। জনশ্রুতি আছে, ‘খুলনা’ নামের উৎস খুল্লনেশ্বরী দেবী। যিনি ধনপতি সওদাগরের স্ত্রী। খুল্লনার স্মৃতিরক্ষার্থে ভৈরব নদের তীরে তার নামে এক মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। আবার কেউ বলেন, মুসলিম আমলের প্রথমদিকে আরব বণিকেরা এখানে প্রবেশ করে বলত ‘আদ খোলনা’। এই ‘আদ খোলনা’ শব্দ থেকে খুলনা শব্দের উৎপত্তি।

খুলনা শব্দের উৎপত্তির বিষয়ে আরও একটা সূত্র পাওয়া যায়, ১৭৬৬ সালে পশুর নদীর দক্ষিণভাগে নিমজ্জিত ‘ফল মাউথ’ নামক জাহাজের নাবিকদের রেকর্ডপত্র থেকে, যেখানে খুলনাকে ‘কুলনিয়া’ বা ‘কলনিয়া’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খুলনার আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ ড. শেখ গাউস মিয়ার মতে, বর্তমানে খুলনা একটা জনবহুল জেলা হলেও এক সময় তা ছিল সুন্দরবনের অংশ। বন কেটে আবাদ করা হয়েছে এ অঞ্চলে। যে কারণে বন জঙ্গল সরে গেছে। নতুন আবাদ বলেই খুলনার আরেক নাম নয়াবাদ। এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য সুদূর অতীতে প্রসারিত। সমুদ্রগর্ভ থেকে অপেক্ষাকৃত পরে উত্থিত হলেও উপমহাদেশের অনেক স্থানের মতো এখানেও প্রাচীনকালে জনবসতি স্থাপিত হয়েছিল বলে জানা যায়। ইতিহাস: পাল আমলে পূর্ববঙ্গে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো খুলনার জনসমাজও বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। সেন আমলে তাদের প্রতিনিধি এ অঞ্চল তথা বুড়নদ্বীপ শাসন করতো। মুসলিম আমলে আসেন হযরত উলুঘ খান এ আজম খানজাহান তথা খানজাহান আলী (রহ.)।

এ অঞ্চল আবাদ ও ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে যার কৃতিত্ব সুবিদিত। এরপর নানা রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্য দিয়ে শাসনক্ষমতা চলে যায় বিদেশিদের হাতে। তাদের দ্বারাই সারা দেশের মতো এখানেও আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। খুলনা জেলার কেন্দ্রবিন্দু ‘খুলনা’। এখন যেখানে মূল শহর এক সময় সে স্থান ছিল ক্ষুদ্র একটি নৌবন্দর মাত্র। পূর্ববঙ্গ ও আসাম থেকে কলকাতার মধ্যে যাতায়াতের একটা সহজ পথ ছিল খুলনা। ১৮০১ সালে মি. চার্লস নামে শ্বেতাঙ্গ নীলকর কর্তৃক এখানে একটা নীলকুঠি স্থাপিত হয়। তিনি তার কুঠির পাশে বাজার বসান। যা বর্তমানে ‘বড়বাজার’ নামে পরিচিত। ১৭৮১ সালে সেটি একটা থানায় রূপান্তরিত করা হয়। সেটি নয়াবাদ থানা। ১৮৪২ সালে খুলনা মহকুমায় রূপ লাভ করে। বলা হয়, শ্বেতাঙ্গ অত্যাচারী জমিদার রেণীকে ইংরেজ শাসনাধীনে আনাই ছিল এ মহকুমা স্থাপনের উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
এমআরএম/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।