ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

শিশুকে ধর্ষণের শাস্তি আড়াই লাখ টাকা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২২
শিশুকে ধর্ষণের শাস্তি আড়াই লাখ টাকা!

ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় এক শিশুকে (৭) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে শাহ আলম মাতুব্বর (২৪) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। উপজেলার আলগী ইউনিয়নের কৈখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ইশারায় সালিশের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর। এতে জনমনে ক্ষোভ ও নানা সমালোচনার ঝড় বইছে।

সোমবার (৩০ মে) সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী ওই শিশুর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কৈখালী গ্রামের হায়দার মাতুব্বরের ছেলে শাহ আলম ও ভুক্তভোগী পরিবারের ওই শিশুর বাড়ি একই এলাকায়। শাহ আলম সম্পর্কে শিশুটির প্রতিবেশী চাচাতো ভাই। এর সুবাদে প্রায়ই শাহ আলম ওই বাড়িতে যাতায়াত করত।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ মে) শাহ আলম ওই শিশুদের বাড়িতে যায়। এসময় পরিবারের কেউ বাড়িতে না থাকায় শিশুটিকে ধর্ষণ করে শাহ আলম। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। ঘটনার পরে শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে ওই অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায় শাহ আলম। বেশকিছু সময় পর শিশুটির মা বাড়িতে ফিরে মেয়েকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়। একপর্যায়ে মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে মাকে সে ঘটনাটি জানায়।  

মেয়েটি আরও জানায়, এর আগেও একাধিকবার শাহ আলম তাকে ধর্ষণ করেছে। পরে ঘটনাটি গ্রামে জানাজানি হয়।  

ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা জানায়, তার শিশু মেয়েটি কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী। এ ঘটনা জানাতে গত বৃহস্পতিবার (২৬ মে) আলগী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলেন তিনি ও তার পরিবার। কিন্তু চেয়ারম্যান সিদ্দিক মিয়ার নানা ব্যস্ততার অজুহাতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিষদে অপেক্ষা করেও সেখানে তার সাক্ষাৎ পাননি ভুক্তভোগীরা। একপর্যায়ে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রাম্য সালিশে গড়ায়। সেই সালিশে অভিযুক্তকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন সালিশপক্ষ।  

মেয়েটির বাবা (কৃষক) আরও জানায়, জরিমানার টাকা ও সালিশের রায় তারা মানতে রাজি হয়নি। গত চার দিন ধরে ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসার জন্য হুমকি ও চাপ প্রয়োগ করছে স্থানীয় একটি মহল। এ ঘটনায় একাধিকবার থানায় যেতে চাইলেও প্রভাবশালী মহলের রোষানলের শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক জনপ্রতিনিধি ও একাধিক ব্যক্তিরা জানান, ধর্ষণের ঘটনাটি ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক মিয়ার ইশারায় স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় গত বৃহস্পতিবার ও রোববার রাতে অত্র গ্রামে সালিশ হয়েছে। সেখানে অভিযুক্ত শাহ আলম মৌখিকভাবে তার দোষ স্বীকার করেছে। পরে সালিশপক্ষ অভিযুক্তকে নগদ আড়াই লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা সেই সালিশ মেনে নেয়নি। এ ঘটনায় গ্রামে জনমনে নানান ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনতিবিলম্বে ধর্ষক শাহ আলমকে আইনের আওতায় এনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।  

আলগী ইউপি চেয়ারম্যন ম ম সিদ্দিক মিয়া বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ধর্ষণের ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রামের কোনো পরিবার তার কাছে আসেনি।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাহ আলমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে শাহ আলমের বাবা হায়দার মাতুব্বর মোবাইল ফোনে বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ হয়েছে। তিনি সেই সালিশের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) ফাহিমা কাদের চৌধুরী জানান, তিনি এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাননি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।