ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না সরাইল ভূমি অফিসে

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না সরাইল ভূমি অফিসে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এক শ্রেণির কর্মচারী হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত অর্থ।  

কৌশলে সরকারি ফি’র বাইরে কয়েকগুণ বাড়তি টাকা নেওয়া হলেও সময়মত মিলছে না সেবা।

মাসের পর মাস ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। কর্মচারীদের অসহযোগিতায় সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় সরকারি সেবা-পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ভূমি অফিসে প্রতিদিন নামজারি, খারিজ, কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, পুরাতন নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন সেবা নিতে। ভূমি অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারী দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কৌশলে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে সেবা গ্রহীতাদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এতে জায়গা- জমি বেচা-কেনাসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে জটিলতা বাড়ছে।  

অন্যদিকে ভূমি অফিসের একটি সূত্র জানায়, এ ভূমি অফিসের ১৬টি পদের মধ্যে ১৩টি পদ দীর্ঘ দুই/তিন বছর ধরে খালি রয়েছে। অফিস সহকারীর পদ দীর্ঘদিন খালি থাকলেও অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে দিয়েই চলছে অফিসের কাজ।  

প্রায় এক বছর হলো অবসরে গেছেন অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম। তিনি এখনও অফিসের কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করছেন। অফিসে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি এ অফিসের কেউ না। অনেক আগেই অবসর নিয়েছি। বেশ কয়েকজনের অভিযোগ, অবসরপ্রাপ্ত নজরুলকে দিয়েই চক্রটি অবৈধ সুযোগ-সুবিধার কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে।

ফুল মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, আমি জমির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ভূমি অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। এর জন্য সরকারি ফি ১১৫০ টাকা হলেও আমার কাছে দাবি করা হয় চার হাজার টাকা। অবশেষে ৩৮০০ টাকা দিয়ে দুই মাস ঘুরে আমার নামজারির কাগজ পেয়েছি।

আরেক ভুক্তভোগী বৃদ্ধ হাসেম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়ির জমির নাম খারিজের জন্য ৩০০০ টাকা দিয়েছি। আজ তিন মাস পার হলেও কাজটি সম্পন্ন হয়নি। অফিসে এলে তারা একেক বার একেক তারিখ দেন। গ্রাম থেকে বার বার আসতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়।

অপর ভুক্তভোগী আব্দুল আলীম বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভিটে বাড়ির নাম খারিজের জন্য প্রায় আড়াই মাস আগে ১১৫০ টাকার ফি’সহ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি। সরকারি ফি কত টাকা জানতে চাইলে তারা সঠিক তথ্য দেন না। ফলে বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। তারপরও কাগজ পাচ্ছি না।

সেবা নিতে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে জানান, তারা নামজারির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও তিন থেকে চার হাজার টাকা বেশি দিয়েছেন। কিন্তু কাগজ পাচ্ছেন না।  

স্থানীয় লোকজন বাংলানিউজকে বলেন, ভূমি অফিসে আসলে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না। প্রতিটি কাজ করতে তাদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। আমাদের দাবি, সরকারি অফিসে যেন আমরা কাঙ্ক্ষিত সেবাটা পাই।  

এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বাংলানিউজকে বলেন, কেউ অবৈধ সুযোগ-সুবিধা চাইলে আমাকে জানাবেন। তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সেবা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।