ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গ্রাহকের টাকা নিয়ে এনজিও ম্যানেজারের চম্পট

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২২
গ্রাহকের টাকা নিয়ে এনজিও ম্যানেজারের চম্পট

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের ৪৩ জন নারীকে ঋণ দেওয়ার নামে সঞ্চয় হিসাবে নেওয়া প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ‘আর্স বাংলাদেশ’ নামে একটি এনজিওর ম্যানেজার পালিয়ে গেছেন  বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তোভাগী এক ঋণ গ্রহীতা নারী ওই এনজিওর ভাড়া অফিসটির বাড়ির মালিক আব্দুল কাদের, ওই এনজিওর পরিচালক বেলাল হোসেন এবং পলাতক ম্যানেজারের নামে গত মঙ্গলবার (৭ জুন) রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় প্রতারণার অভিযোগ করেছেন।

তবে পলাতক ওই ম্যানেজারের বিস্তারিত পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, পালিয়ে যাওয়া ওই এনজিও কর্মকর্তা ১০-১২ দিন আগে শাখা অফিস হিসেবে পঞ্চগড়ের পুরাতন পঞ্চগড়ের ধাক্কামাড়া এলাকার আব্দুল কাদেরের বাড়ি ভাড়া নিয়ে আর্স বাংলাদেশ নামে শাখা অফিস খুলেন। এনজিওর প্রধান অফিস যশোর সদর উপজেলার কোতোয়ালি থানার কাজীপাড়া কাঁঠালতলার ২০৩ নম্বর বাড়ি। পাশ বইয়ে রেজিস্টেশন নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আর্স বাংলাদেশ পঞ্চগড় শাখার ওই কর্মকর্তা গত মে মাসের শেষের দিকে জেলা সদর উপজেলার পূর্ব ইসলামবাগ, সীতাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ৪৩ জন নারীকে এনজিওর সদস্য করেন। ১০-১২ জন নারীকে নিয়ে একটি করে দল গঠনও করেন তিনি। প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা নেন। পরে তাদের এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগ্রহীদের আরও ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা করার নির্দেশনা দেন তিনি। ওই কর্মকর্তা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে নিজের পরিচয় দেন।  

গত ০৫ জুন ম্যানেজার ঋণ পেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় চাইলে প্রায় ওই ৪৩ সদস্য ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা তাকে সঞ্চয় হিসাবে জমা দেন। এর পর তাদের মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুরে অফিসে গিয়ে ঋণের টাকা গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু মঙ্গলবার অফিসে ঋণ চাইতে গেলে তারা অফিসে তালা ঝোলানো দেখতে পান। পরে ওই ম্যানেজারের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ভুক্তভোগীরা বাড়ির মালিক আব্দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অফিস বন্ধ করে ওই লোক চলে গেছেন বলে জানানো হয়। পরে আর্স বাংলাদেশের ওয়েব সাইট থেকে পরিচালক বেলাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। এদিকে বেলাল হোসেন তাদের বলেন- পঞ্চগড়ে আর্স বাংলাদেশের কোনো শাখা অফিস নেই।

পঞ্চগড়ের সীতাপাড়া গ্রামের মোছাম্মদ বেনু অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, ১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ওই ম্যানেজার আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমার দলের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করেও নেন। গত ০৭ জুন আমাদের অফিসে আসতে বলা হয়। আমরা অফিসে এসে তালা বন্ধ অবস্থায় পাই। মোবাইলফোনও বন্ধ। আমি তার নাম জানি না। পরে থানা পুলিশকে অভিযোগ দেওয়া হয়।

পূর্ব ইসলামবাগ এলাকার মেহেরুন আক্তার বলেন, ম্যানেজার আমাকে দলের নেতা বানিয়ে দেন। আমাকে তিনি জুয়েল নামে পরিচয় দিয়েছিলেন। আমি আমার দলের বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দিয়েছি। ০৭ তারিখ ওই অফিস বন্ধ পাই। এখন অন্য সদস্যরা আমার স্বামীর ভ্যান আটকে রেখেছেন। ভ্যান চালিয়েই আমাদের সংসার চলে।

ভাড়া অফিসের বাড়ির মালিক আব্দুল কাদের বলেন, ওই ম্যানেজার একদিন আগে আমার বাড়িতে কাগজপত্র জমা রেখে চলে গেছেন। অগ্রিম কোনো ভাড়া দেননি। আমি তাদের সম্পর্কে কিছু জানি না। তাদের ভাড়া নেওয়ার কথা ছিল।

এ বিষয়ে আর্স বাংলাদেশের পরিচালক বেলাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কার্যক্রম পঞ্চগড় জেলায় নেই। কেউ আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করতে পারে। আমরা বিষয়টি দেখছি।
 
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।