ফেনী: টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার (২০ জুন) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১.১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনীর উত্তরাঞ্চলের মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যায় নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন জানান, বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাঁধের ২১টি ঝুঁকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ দিলে সেগুলো সংস্কার করা হবে।
বাঁধ ভাঙার বিষয়ে আকতার হোসেন জানান, পূর্বে বাঁধের যেসব স্থানে ভাঙন দেখা গিয়েছিল, সেসব স্থানে ভাঙার আশঙ্কা নেই। গত বছর ১২২ কিলোমিটার এ বাঁধটির ২৫টি স্থানে ভেঙেছিল। এ দীর্ঘ বাঁধের যেকোনো স্থানেই ভাঙতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।
অন্যদিকে বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও মুহুরী ও কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। উপজেলার জয়পুর, ঘনিয়ামোড়া ও উত্তর দৌলতপুরসহ বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধে ভাঙন দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ঘনিয়ামোড়া এলাকার বাসিন্দা শ্রমিক নেতা নুরুল আমিন বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদীর ভাঙন দেখা দিতে পারে। তাই সতর্কতামূলক পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, ফুলগাজীতে নিলামের মাধ্যমে নদীর বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীর পলি মাটি সরে গিয়ে যেকোনো স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নদীর সরু পথ প্রশস্ত না করা ও বাঁশঝাড় না কাটলে নদী গতিপথ পরিবর্তন করলে ভাঙন রোধ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর বন্যা হয় আর ত্রাণ বিতরণ করে আমরা সময় পার করি। কিন্তু বাস্তবসম্মত নদীর ভাঙন রোধে কোন কাজে আসে না। উপজেলা চেয়ারম্যান পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকে দায়ী করে আবদুল আলিম বলেন, নদীর সংস্কার ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সময়ের দাবি।
জানা গেছে, পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে ফেনী- ১ সংসদীয় এলাকা গঠিত। প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের বাস এ জনপদে। প্রতিবেশী ভারত হতে উৎস মুহুরী নদী প্রবাহিত হয়েছে এই তিন উপজেলার বুক চিরে।
র্ষায় চির যৌবনা এ মুহুরী নদীর করাল গ্রাসে বানভাসী মানুষের ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সর্বনাশা বন্যায় সৃষ্ট নদীর ভাঙনে অবহেলিত এ জনপদের মানুষের ধান পানিতে তলিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, মুহুরী নদী শাসন, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের মাধ্যমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন বন্ধসহ সিলোনীয়া, কহুয়া ও গথিয়া নদী ও খালের প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুনঃখনন করা সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
এসএইচডি/এসআইএস
