ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

তিন বছরের কাজ শেষ হয়নি ৬ বছরেও

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
তিন বছরের কাজ শেষ হয়নি ৬ বছরেও

রাজশাহী: রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর। প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল এরও দেড় বছর আগে।

আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল তিন বছর। সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বিধিবাম, প্রকল্প নির্ধারিত তিন বছরের কাজ শেষ হয়নি ৬ বছরেও!

এই ৬ বছরে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চারবার। ফলে বছর বছর মেয়াদ বাড়ায় স্থায়ী ভবনসহ আধুনিকায়ন প্রকল্পের ব্যয় ও সময় দুটিই বেড়েছে। একাডিমির ৯৫ শতাংশ কাজের পর থমকে গেছে সবকিছুই। প্রকল্প পরিকল্পনায় পরিবর্তন, অনুমোদনের অপেক্ষাসহ নানান জটিলতায় শুরু হলেও শেষ হচ্ছে না- দেশের একমাত্র কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির কাজ।  

শুধু কী তাই? নির্মাণ কাজ থেমে থাকায় প্রকল্পের পরিবর্তিত নতুন প্রস্তাবনায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বাড়ছে। অবশিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরও প্রায় ২০ কোটি টাকা চেয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। আর প্রকল্পটির কাজ শেষের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। যদিও প্রস্তাবটি এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই নির্মাণ কাজ পুরোপুরি বন্ধ।

এই জুন মাসেও অবশিষ্ট কাজ শুরু হয়নি। ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা ভবনগুলো জুড়ে বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা। সেখানে নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলেছে পোকামাকড়রা। আর রাতে অসম্পন্ন ভবনগুলো পরিণত হচ্ছে ভুতুরে ভবনে। পদ্মানদী ঘেঁষা এই ভবগুলোর পাশ দিয়ে কেউ হাঁটছে না রাতে।

রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। আর কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠিক পাশেই দেশের একমাত্র কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়ে তোলা হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৫ সালে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। চতুর্থবারের মতো কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

আর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও প্রশিক্ষণ একাডেমির কার্যক্রম চলছে কারাগারের ভেতরে থাকা পুরোনো সেই একতলা ভবনেই। যেটি নানান সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সেখানে জেল সুপারদের ৬ মাস মেয়াদি ৬টি, ডেপুটি জেলাদের ৩ মাস মেয়াদি ১০টি এবং পুরুষ কারারক্ষী ও নারী কারারক্ষীদের ৩ মাস মেয়াদি ৩৭টি ব্যাচে মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।  

কারা অধিদপ্তর থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এই প্রশিক্ষণার্থীদের কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান, সুশৃঙ্খল আচরণ, বন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ, সৌজন্যবোধ ও প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কারা অধিদপ্তরের অধীনে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির রাজশাহীর সার্বিক সমন্বয়কের ভূমিকায় আছেন ডিআইজি প্রিজন্স। কমান্ড্যান্টের দায়িত্বে আছেন- রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, কোর্স কো-অর্ডিনেটর ও প্যারেড অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন- একজন ডেপুটি জেলার। একজন প্রধান প্রশিক্ষক ও ৯ জন সহকারী প্রশিক্ষকের মাধ্যমে কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে একাডেমির অবকাঠামো সুবিধা যুগোপযোগী নয়।

তাই এটি যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে স্থায়ী ভবন নির্মাণসহ আধুনিকায়নে ২০১৫ সালের জুনে একনেকে ৭৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকার এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য মোট ১০০ একর জমিতে প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। যেখানে কেন্দ্রীয় কারাগারের জমি ছাড়াও ৪৭ একর জমিতে অ্যাসল্ট গ্রাউন্ডসহ কিছু সহায়ক স্থাপনা নির্মাণের জন্য পদ্মার জেগে ওঠা চরের জমি ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে চাওয়া হয়েছিল।  

কিন্তু নানান কারণে বিভিন্ন মহলের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রায় ৬৬ একর জমির মধ্যে ২৪ একর জমিতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর পরিকল্পনায় তিনতলা এমআই বিল্ডিং, পুরুষ ও নারীদের জন্য ট্রেইনি ব্যারাক, প্যারেড গ্রাউন্ড, কোয়ার্টার ও ৫ হাজার ৯৯২ বর্গফুটের একাডেমিক অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবনের সঙ্গে নতুন করে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, এমআই ভবনে নতুন করে দুইটি ফ্লোর, ডাইনিং কাম কিচেনসহ এসি ও লিফটের প্রস্তাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন- অন্তত ছয়জন কর্মকর্তা। সর্বশেষ পিডি রয়েছেন- ড. সঞ্জয় চক্রবর্তী।  

তিনি বলেন, প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ। প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। এরই মধ্যে ৪৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হচ্ছে আগের পরিকল্পনায়। ভবনে এসি, লিফট ও ফ্লোরের সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। এতে প্রকল্পের কাজ শেষের জন্য আরও সময় লাগবে। ব্যয়ও বাড়বে প্রায় ২৫ শতাংশ। হাতে থাকা অবশিষ্ট ৩০ কোটি টাকায় আসবাবপত্র  এবং এসি কেনা এবং সাজসজ্জার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। এজন্য আরও অন্তত ৫০ কোটি টাকা দরকার। তাই আরও কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি পরিকল্পনা কমিশনে ঘুরে অনুমদোন হয়ে আসলে অর্থ বরাদ্দ হবে। তখন কাজও শুরু হবে।

এদিকে, কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১। সেখানকার নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জানান, ভূমি উন্নয়নসহ বিভিন্ন জটিলতায় কাজটি এমনিতে শুরু হয়েছিল দেরিতে। এর ওপর দেশে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি ও পরিকল্পনা পরিবর্তনসহ নানান কারণে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে। বর্তমানে একাডেমির ভবনগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ। কিন্তু পরিবর্তিত পরিকল্পনায় বেশকিছু সংযোজন রয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে এই ভবনগুলোর বাকি কাজ এক দেড় মাসের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব। # 

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
এসএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।