ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ধন্যবাদ’ জানাল পথশিশুরা, ফিরতে চায় সমাজের মূলধারায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
‘ধন্যবাদ’ জানাল পথশিশুরা, ফিরতে চায় সমাজের মূলধারায়

ঢাকা: শাহাদাৎ, বাড়ি চাঁদপুর। বাবা-মা, ভাই-বোনের পরিবার নদী ভাঙনে সর্বস্বান্ত।

আর্থিক অনটন সহ্য করতে না পেরে ঢাকায় এসে কর্মসংস্থান করবে বলে মনস্থির করে সে। চাঁদপুর থেকে লঞ্চে করে আসে ঢাকার সদরঘাটে। অচেনা অজানা ঢাকা শহরের কঠিন বাস্তবতার ফাঁদে পড়ে সে যখন অনাহারে অনাদরে কষ্টের দিন যাপন করছিল তখন তারই মতো এক শিশু তাকে বারাকা সেন্টারে নিয়ে আসে। বর্তমানে সে সেন্টারের দিবা ও রাত্রিকালীন সেবা নিচ্ছে। শাহাদাৎ এখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র।

শিশু পপি তার পরিবারের নিদারুণ বিশৃঙ্খলায় ছিল। জন্মের পর থেকে সে দেখে এসেছে, তার মায়ের ওপর বাবার নির্যাতন। তুচ্ছতাচ্ছিল্যই ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। এক পর্যয়ে পপির বাবা পপি এবং তার মাকে পরিত্যাগ করে অন্যত্র গিয়ে পুনরায় বিয়ে করেন। পপির মা আরেকজনকে বিয়ে করেন। সেখানেও ঠাঁই হয়নি শিশু পপির। পপির দ্বিতীয় বাবা পপির ভরণপোষণ দিতে অস্বীকার করেন। কোনো উপায়ান্তর না দেখে পপির মা পপিকে বারাকা সেন্টারে পাঠান। পপি এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে এবং দিবা ও রাত্রিকালীন সেবা নিচ্ছে।

সোমবার (২০ জুন) স্থানীয় দাতাদের ধন্যবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে বারাকা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উঠে আসে ভাগ্যাহত শিশুদের জীবনের গল্প।

২০১০ সাল থেকে দুস্থ, সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্য বারাকা ‘দিবা এবং রাত্রিকালীন আশ্রয়কেন্দ্র’ পরিচালনা করে আসছে। কারিতাসের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ যাবৎকালের সেবা কার্যক্রম চলমান ছিল। বর্তমানে বারাকার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, প্রভাবশালী-বিত্তশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা। বিভিন্ন সময়ে তারা খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা-উপকরণসহ আর্থিক সহায়তা দিয়ে বারাকার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুড অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি হাজী আব্দুল করিম, ৩১ ও ৩২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাসরিন রশিদ পুতুল, বংশাল থানার এসআই (অপারেশন) মো. কামরুল ইসলাম, সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের ১৯৯৬ এবং ২০১৬ ব্যাচের ছাত্র এবং বারাকা আলোকিত শিশু প্রকল্পের সকল কর্মী ও শিশুরা।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইনচার্জ আবুল কাসেম সরকার অনুদান দাতাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, অনুদান দাতাদের দান যেন সুপাত্রে ব্যয় হয় এবং সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তার দায়িত্ব পালন করছে বারাকা।

সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের ১৯৯৬ সালের ছাত্র রয়ন শুরুতেই পথশিশুদের জন্য বারাকার এ মহৎ কার্যক্রম পরিচালনার নেপথ্যে যে সকল কর্মী নিরলস অবদান রেখেছেন তাদের সাধুবাদ জানান। একদিন এই শিশুরাও সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে তাদের মতো অনাহারিদের সহায়তা করবে। নিজেকে ভালো রেখে তাদের মত অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরও ভালো পথে ফিরিয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

লিভা লিওনী রোজারিও বারাকার প্রয়াত পরিচালক ব্রাদার রবি পিউরিফিকেশনকে স্মরণ করে বলেন, পথশিশুরা ছিল ব্রাদারের প্রিয়। আজকের বারাকার এই কার্যক্রম ব্রাদারের অন্তরের শিশুদের জন্য আবেগঘন স্নেহ-মমতার বহিঃপ্রকাশ।

কাউন্সিলর নাসরিন রশিদ পথশিশুদের অন্ধকার পথ থেকে ফিরিয়ে এনে অলোর পথ দেখানোর জন্য বারাকাকে ধন্যবাদ জানান এবং শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার প্রশংসা করেন।

এসআই কামরুল ইসলাম বলেন, আজ শিশুদের দেখে আমি আবেগাপ্লুত। ছোট শিশুদের পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়েছি। তিনি বারাকার কর্ম এলাকা সম্পর্কে জেনে নেন এবং পরবর্তীতে প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

বাংলাদেশ ফুড অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি হাজী আব্দুল করিম বলেন, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃ-ক্রোড়ে’, দুর্ভাগ্যবসত যেহেতু পথশিশুরা তাদের মা-বাবা পরিবার হারিয়েছে তাই বারাকাই আজ তাদের পিতা-মাতা পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। বারাকার কর্মীরা এই শিশুদের শিক্ষক। আর শিক্ষক হলেন মনুষ গড়ার কারিগর।

সবশেষে ফিল্ড অফিসার শাহীনূর খাতুনের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।