ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানে ‘আলোর পেছনে অন্ধকার’

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ময়মনসিংহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানে ‘আলোর পেছনে অন্ধকার’

ময়মনসিংহ : সারা দেশে অনিবন্ধিত ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি বছর ২৯ মে’র মধ্যে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সে মোতাবেক ময়মনসিংহ জেলাজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। অভিযানে আলোর পেছনে অন্ধকার দেখতে পেয়েছেন সচেতন মহল।

সোমবার (২৭ জুন) দুপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহে অভিযান পরিচালনা করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ সময় মোট ৬৭টি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়। ময়মনসিংহ নগরীতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে মাত্র ৯টি।

কিন্তু জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীতে বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই নিবন্ধনও নবায়ন নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, জেলায় সরকারি তালিকায় থাকা চিকিৎসা সেবা দেওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯২টি। এর মধ্যে আবার ৪৩টির নিবন্ধন নেই। এ তথ্য জানিয়েছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র।     

এমন অব্যবস্থাপনা, নির্দেশনার অভাব, স্থানীয় সরকার বিভাগের গড়িমসি ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো নিয়ে গুরুত্ব না দেওয়া বিষয়গুলোই ‘আলোর পেছনে অন্ধকার’ বলে মনে করছেন সকলেই। মূলত, জেলার ১৩টি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক বন্ধ করা হলেও নগরীতে এর কোনো প্রতিফল না হওয়া বাতির পেছনে আঁধার বলে মনে করছেন তারা।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত কর্মকর্তারা ১৪১টি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। এর মধ্যে নবায়ন ও নিবন্ধন না থাকাসহ নানা অনিয়ম-অভিযোগে বন্ধ করা হয়েছে ৬৭টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শুধু নগরীতে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু অনিয়মের কারণে অর্থদণ্ড করা হয়েছে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠানকে, বন্ধ করা হয়েছে ৯টি।

কিন্তু গুরুত্বহীনতা, নজরদারি না রাখায় গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় সবকটি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়ে গেছে। শুধুমাত্র রেনেসাঁ নামক একটি হাসপাতাল বন্ধ রয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা।

ওই সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীর তিন শতাধিক ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালের মধ্যে বেশির ভাগের নবায়ন তো নেই-ই, নেই নিবন্ধনও। চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলছে গড়িমসি। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলোয় পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, অভাব রয়েছে অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্টের। কিন্তু দাপট দেখিয়েই সেবা নিশ্চিতের কথা বলে প্রতিষ্ঠানগুলো, রোগীদের ওপরে করে চলেছে প্রভাব বিস্তার। স্বাস্থ্য বিভাগের নীতিমালাও মানে না কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি নগরীর চরপাড়া এলাকার সিরাম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব এইড হাসপাতাল, আইডিয়াল ও রেজিয়া ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নাবয়ন না নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিন্ন অবস্থা নগরীর কফিক্ষেত এলাকার সীমান্ত হাসপাতালের। এ ছাড়া হাসপাতালটির পরিবেশ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। দুর্গন্ধময় নোংরা পরিবেশে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন অসংখ্য ভুক্তভোগী।

লম্বা সময় ধরে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় হাজারো রোগীদের সেবা দিয়ে চলেছে লিবার্টি হাসপাতাল। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। খোদ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়-ই এ তথ্য জানিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা অনুযায়ী ১০ শয্যার ক্লিনিক ও হাসপাতালের বাৎসরিক নবায়ন ফি পঞ্চাশ হাজার টাকা। কিন্তু বেশ কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান আরও বেশি সংখ্যক শয্যা নিয়েও চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের নীতিমালাকে পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না।

আবার অপেক্ষামূলক ছোট চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা বলছেন, বড় প্রতিষ্ঠানের কারণে তাদের শ্রেণি বিন্যাস কাঠামোয় বৈষম্য হচ্ছে।

ময়মনসিংহের আলোচিত-সমালোচিত শিলাঙ্গন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, জরায়ু কেটে ফেলাসহ নানারকম অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। রোগীর সেবায় গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদক্ষেপও নেই তাদের। হাসপাতালের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আছে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ।

এতসব অভিযোগ-অনুযোগের ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানে কতটুকু করতে পেরেছি তার মূল্যায়ন আমার কাছে নেই। এ সব ব্যাপারে তদবির-সুপারিশ প্রতিবন্ধকতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যেতে চান বলে জানান।

এ চিকিৎসক বলেন, জেলার ১৩টি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও সব কাজ করা সম্ভব হয় না। আমাদের জনবল কম। তবুও উপজেলা থেকে একজন ডাক্তার এনে মোট ৫ সদস্যের একটি টিম অনিবন্ধিত ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল বন্ধে অভিযানে কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের চেষ্টা চলছে। এছাড়া অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ অভিযানে অংশ নিচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. শাহ আলম বলেন, অভিযানে প্রথম শর্ত হিসেবে নিবন্ধন ও নবায়নকে প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তবে সিলাগালা বা বন্ধ করে দেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।  

তিনি আরও জানান, অভিযানে ময়মনসিংহে বিভাগে ৩২৭ টি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ১৯৭টি এবং ৪৭টি প্রতিষ্ঠানে নানা অসঙ্গতির কারণে জরিমানা করা হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে নানা অসঙ্গতির কারণে নোটিশ দিয়ে সর্তক করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

অভিযান সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ডা. শাহ আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ২৭ জুন, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।