ঢাকা, রবিবার, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৬ মে ২০২৪, ১৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

২০ মেগা প্রকল্পের ঋণ শোধের বড় ধাক্কা আসছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সিনিয়র করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
২০ মেগা প্রকল্পের ঋণ শোধের বড় ধাক্কা আসছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

ঢাকা: বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে রাশিয়া, জাপান ও চীন। প্রকল্পগুলো যেমন বড়, এসবের ঋণের পরিমাণও বড়।

আগামী ২০২৪ ও ২০২৬ সালে এসব দেশের ঋণ পরিশোধে বড় একটি ধাক্কা আসবে। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বাংলাদেশের বৃহৎ বিশটি মেগা প্রকল্প: প্রবণতা ও পরিস্থিতি শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এ আহ্বায়ক বলেন, বাংলাদেশের ২০টি মেগা বা বড় প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। এই ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ যাবে রাশিয়া, জাপান ও চীনের কাছে। মেগা প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে, যা অর্থনীতির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ২০টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক অর্থায়ন সাশ্রয়ীভাবে হয়েছে, এটা বড় সন্তোষের জায়গা। এসব প্রকল্পে ৪৫টি ঋণ প্যাকেজের মধ্যে পাঁচটি অনুদান, ৩৩টি সাশ্রয়ী ঋণ প্যাকেজ, আধা সাশ্রয়ী দুটি ও বাণিজ্যিকভাবে নিতে হয়েছে পাঁচটি ঋণ প্যাকেজ; যা চীন থেকে এসেছে। অর্থায়নটা ভালো হয়েছে বলতে হবে। পরিমাণের হিসাবে চীন তৃতীয় হলেও দায়-দেনা পরিশোধের সময়সূচি হিসাবে দেশটিকে সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক দায়-দেনা ১৭ শতাংশে নিচে ও অভ্যন্তরীণ দায়-দেনা ১৭ শতাংশের ওপরে। লক্ষণীয় হলো- এটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০১৮ সালের পর দায় দেনা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। আর শীর্ষ ২০টি প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের বড় ধাক্কা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। ঋণ পরিশোধের সবচেয়ে বড় অংশ ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ যাবে রাশিয়ার কাছে, এরপর জাপানে যাবে ৩৫ শতাংশ এবং চীনের কাছে প্রায় ২১ শতাংশ। অংকের হিসাবে চীন তৃতীয় হলেও দায়-দেনা পরিশোধের যে সময়সূচি, তাতে সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে চীনকে। বিরাট ধাক্কা সামলাতে কর আহরণ বাড়াতে হবে। কারণ কর জিডিপির পরিমাণ এখনও দশের নিচে।

এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, সাদা চোখে দেখতে পাচ্ছি দায়-দেনার বড় ধাক্কা ২০২৪ ও ২০২৬ সালের আসবে। আমার বড় উদ্বেগের বিষয় সরকার ঋণের ৫০ শতাংশ নিয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। ওটা পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলো তারল্য পাবে না। অন্যদিকে যেসব প্রকল্প শুরু হয়নি, অতি জরুরি না হলে সেগুলো স্থগিত করা প্রয়োজন। আর যেসব প্রকল্প এগিয়ে চলছে কিন্তু ব্যয় কাঠামোর স্বচ্ছতা নেই, প্রকাশ্যভাবে দুর্নীতি কিংবা অতি মূল্যায়িত হয়েছে, সেগুলো পুনঃমূল্যায়ন করার প্রয়োজন। আর যেগুলো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে সেগুলোর দায়-দেনার সময় কাঠামোকে পুনঃতফসিলিকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।

আইএমএফের ঋণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, এটাই শুভকর ছিল। আইএমএফের কাছে শুধু টাকার জন্য যেকোনো দেশ যায় না। এই প্রতিষ্ঠান পাশে থাকলে বিশ্ববাজারে আস্থার জায়গা তৈরি হয়। সাহায্য যাই হোক। মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করি।

দেশের ২০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-১, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রজেক্ট, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৫, লাইন-৬, পদ্মা ব্রিজ রেল সংযোগ, ফোর্থ প্রাইমারি অ্যাডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, এক্সপানশন হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিপিডিসির পাওয়ার সিস্টেম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, সেফ ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প ও কভিড ইমারজেন্সি রেসপন্স ও প্যান্ডামিক প্রিপারেডেন্স প্রকল্প ইত্যাদি।

এসব প্রকল্পের ব্যয় ৫লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা (৭০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার)। যার ৬১ শতাংশ আসে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় এ ব্যাপারে বলেন, ২০টি প্রকল্পের ১৫টিই সড়ক ও যোগাযোগসহ ভৌত অবকাঠামোগত খাতে। বাজেটের ৩০ শতাংশ অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ গেছে মেগা প্রকল্প খাতে। মেগা প্রকল্পগুলো যতই যৌক্তিক হোক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে অবহেলার সুযোগ নেই। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১১টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের পর নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের হার দুর্বল। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ১০ এর নিচে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সবগুলো প্রকল্পের কাজ বাকি থাকবে। ২০টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টি প্রকল্প ব্যয় সময় সময় বাড়ানো হয়েছে। আমি মনে করি, ২০২৪ ও ২০২৬ সালে দায়-দেনা পরিশোধে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সাহায্য চাওয়াটা ইতিবাচক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
এসএমএকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।