ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রেমিকের অন্যত্র বিয়ের খবর শুনে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২২
প্রেমিকের অন্যত্র বিয়ের খবর শুনে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা

মাগুরা: অন্যত্র বিয়ের খবর শুনে ক্ষোভে প্রেমিক আলী নূর বিশ্বাসকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন আহিনা খাতুন নামের এক নারী। র‌্যাবের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গত ৩০ জুলাই ভোরে আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকায় ঘটে এমন ঘটনা। পরে বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট) নিহতের মরদেহ গ্রামের বাড়ি হোগলডাঙ্গায় পৌঁছালে সেখানে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত আলী নূর বিশ্বাস মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের মো. বাহাদুর বিশ্বাসের ছেলে। তিনি সাভারে রিকশা চালাতেন।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল আলী নূর ঢাকার চাকরি করতেন। সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে তিনি অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে আহিনা খাতুনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সাভারে জিরাবো বাজার এলাকায় একটি টিনশেডের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

এভাবে চলতে চলতে কোরবানির ঈদে আলী নূর বাড়িতে এলে শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের রজব জোয়ার্দ্দারের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ে করেই আলী নূর তার নতুন বৌকে শুশ্বর বাড়ি রেখে ১৭ জুলাই সাভারে কাজ করতে চলে যান। সেখানে গিয়ে আবার অহিনার সঙ্গে থাকা শুরু করেন। আর আলী নূরের বিয়ের কথা জানতে পেরে আহিনার মনে ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার সৃষ্টি হয়। তার পর থেকেই আলী নূরকে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করেন ওই নারী।

বাড়ি বদল করে নূর ও অহিনা আবার স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে গত ২৯ জুলাই আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকায় দেলোয়ার বেপারীর টিনশেড বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠেন। সেখানে ৩০ জুলাই রাতে খাবার শেষে দুইজনেই ঘুমিয়ে পড়েন। পরে এদিন ভোরে ঘুমন্ত অবস্থাতেই আলী নূরকে দা দিয়ে মাথা, গলা এবং বুকে কুপিয়ে হত্যা করেন অহিনা।

ঘটনার পরে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। এর পরে বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। তদন্তের ভিত্তিতে র‌্যাবের হাতে আটক হন আসামি আহিনা খাতুন। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বেরিয়ে আসে হত্যার আসল রহস্য।

র‌্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাকিব মামুদ খান জানান, নীলফামারী জেলার মিজানুর রহমানের সাঙ্গে অহিনা খাতুনের প্রথম বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহের কারণে বিয়ের দেড় বছর পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ওই পরিবারে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরে তিনি আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় চাকরির সুবাদে এলে আলী নূরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকে শুরু হয় তাদের সম্পর্ক। পরে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের এ সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে।  

নিহতের বড় ভাই নূর আলম বাংলানিউজকে বলেন, আলী নূর কোরবানির ঈদে বাড়ি এলে পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের আগে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তার কোনো পছন্দ আছে কিনা, সে জানায় তার কোনো পছন্দ নেই। এ কারণে তাকে পরিবারের আত্মীয়-স্বজন মিলে বিয়ে দেওয়া হয়। এখনও নতুন বৌ ঘরে তুলতে পারিনি। তার আগেই আমার ভাই হত্যার স্বীকার হয়েছে।  

আলী নূরুরের বাবা মো. বাহাদুর আলী বাংলানিউজকে বলেন, আহিনা খাতুন নামের এক বিবাহিতা নারীর সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হয়েছে তা আমরা কেউ জানতাম না। সেও কোনোদিন আমাদের কিছু বলেনি। তাই তাকে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়েটাই যে তার জন্য কাল হবে তা বুঝতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, র‌্যাবের হাতে আমার ছেলের হত্যাকারী আটক হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আমরা তার বিচার চাই।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।