ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বুয়েটে পড়ার সুযোগ পেলেন দর্জির ছেলে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
বুয়েটে পড়ার সুযোগ পেলেন দর্জির ছেলে

নীলফামারী: বাবা করেন সামান্য দর্জির কাজ। আর মা দেখেন সাংসারিক কাজকর্ম।

এমনি দরিদ্র বাবা-মায়ের সন্তান আবুল বাশার (১৮)। অত্যন্ত মেধাবী তিনি। তাদের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। তবে সব ক্ষেত্রে মেধার সাক্ষর রেখে চলেছেন বাশার। সে ধারাবাহিকতায় এবার সুযোগ হয়েছে বুয়েটে পড়ার। বাশারের আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় এক হাজার ৭০২তম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ষষ্ঠতম স্থান অর্জন করেন।

আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যলয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমান তালিকায় ছিলেন তিনি। আগে থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বুয়েটেই পড়াশোনা করার। অবশেষে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। বাশার বুয়েটে নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবরে তার পরিবার, এলাকা ও নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনে খুশির বন্যা বইছে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ওয়াপদা গেট খলিফাপাড়া এলাকার দরিদ্র দর্জি তসলিম উদ্দীন ও বিউটি বেগম দম্পতির ছেলে আবুল বাশার।

ওই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছোট বোন তাজমিম আক্তার অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে। আবুল বাশার স্থানীয় সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান। প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসসি ও এসএসসিতেও ছিল জিপিএ-৫ এর কৃতিত্ব।

বাবা-মায়ের মতো বাশারও খুব পরিশ্রমী। তাই পড়ালেখায় বেশি মনযোগী হওয়ায় বাবা-মা তাকে কোনো কাজ করতে দেয়নি। প্রতিদিন পরিশ্রম করে সংসারের চাহিদা পূরণ করতেন বাশারের বাবা-মা।

কথা হয় আবুল বাশারের সঙ্গে। জীবন সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করে আবুল বাশার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠেছি। মা-বাবাকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে দেখেছি। সকাল হলে বাবা চলে যান কাজে, আর মা সংসারের কাজে ব্যস্ত। অর্থাভাব ও শত কষ্টের মাঝেও নিজেকে প্রস্তুত করি। ভাবতাম একদিন বুয়েট থেকে প্রকৌশলী হিসেবে বের হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব। তখন মা-বাবার দুঃখ-কষ্ট দূর হবে। আল্লাহর মেহেরবানীতে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ওই স্বপ্নের পথে এক ধাপ এগিয়েছি। আমার সাফল্যের পেছনে শিক্ষক ও মা-বাবার অবদানই বেশি বলে মনে করেন তিনি।

বাশার বলেন, ‘নানা পর্যায়ের শিক্ষকরা আমাকে সহযোগিতা করছেন।

মেধাবী বাশারের ব্যাপারে সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান জুয়েল বলেন, শুধু পড়ালেখায় নয়, সব দিক দিয়েই খুব ভালো ছেলে বাশার। তার অদম্য ইচ্ছা শক্তিই তাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। বাশারের সাফল্যে আমরা সবাই অনেক খুশি ও গর্বিত।

ছোটবেলা থেকেই আবুল বাশার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বলে জানান তার মা বিউটি।

বাশারকে নিয়ে বিউটি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কাগজ কেটে বাড়ি বানাতো। উড়োজাহাজ দেখলেই দৌড়ে ঘর থেকে বের হতো। বলতো ‘বড় হয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো। ’ ওর ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট ছিল, সব ভুলে গেছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।