ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

৬ দিনেও খোঁজ মেলেনি পদ্মায় লাফ দেওয়া নুরুজ্জামানের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
৬ দিনেও খোঁজ মেলেনি পদ্মায় লাফ দেওয়া নুরুজ্জামানের

ময়মনসিংহ: ছয় দিন পার হলেও এখনো খোঁজ মেলেনি পদ্মা সেতু থেকে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া যুবক নুরুজ্জামানের। তাকে উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

তবে তার স্বজনরা দাবি করেছেন তাকে হত্যা করে পদ্মায় ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় নুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের মাঝে শোকাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।  

জানা যায়, নুরুজ্জামান ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চুড়ালি গ্রামের আব্দুল মালেক ও হেলেনা দম্পতির ছেলে। তারা চার ভাই ও তিন বোন। গত ২০ বছর ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেখানেই চাকরির সুবাদে সফুরা আক্তার নামে এক নারীকে বিয়ে করে সংসার করে আসছিলেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে দু’টি সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে।  

তবে ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন নুরুজ্জামানের চাচা আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, ভিডিওটা দেখলেই বোঝা যায় যে নুজ্জামানকে মেরে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কারণ একটা মানুষ লাফ দিলে যেভাবে পড়ে, নুরুজ্জামান সেভাবে পড়েনি। দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে যেন একটি মূর্তি ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা তার মরদেহ চাই এবং হত্যাকারীদের বিচার চাই।  

নুরুজ্জামানের বোন ময়না বলেন, আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। অন্য মানুষকে বলত, আত্মহত্যা মহাপাপ। সেই মানুষ কিভাবে আত্মহত্যা করে। আমার ভাইকে খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

মা হেলেনা বেগম বলেন, নুরুজ্জামানের বউ, তার বোন, তার জামাই ও ছেলেরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। জমি নিয়া তাদের সঙ্গে ঝামেলা ছিল। তাই আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

নুরুজ্জামানের ভাই আবুল কাশেম বলেন, গত ১৫ আগস্ট আমার ভাই পদ্মা সেতু থেকে লাফ দিয়েছে এমন খবর পেয়ে ওই দিন মধ্যরাতে তাদের বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে ভাইয়ের স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাই। তাদের দরজায় প্রায় আধাঘণ্টা ধাক্কাধাক্কি করার পর ভাইয়ের স্ত্রী সফুরা দরজা খোলে। পরে আমি ভাইয়ের স্ত্রী সফুরা, দুই ভাতিজি সফুরার বোন ও তার জামাই ফজলুল হক এবং তার ছেলে মোজ্জাম্মেল হককে নিয়ে পদ্মা সেতু এলাকার থানায় যাই।

সেখানে গিয়ে ওই গাড়িরচালক ও নুরুজ্জামানের সঙ্গে থাকা ফারুক মিয়াসহ দুইজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানতে পারি। পরে এই বিষয়ে আমরা থানায় অভিযোগ করতে চাইলে পুলিশ বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেন।

এদিকে মোজাম্মেলের সঙ্গে থাকা ফারুকের আত্মীয়রা তাকে ছাড়িয়ে আনতে যান। তবে পুলিশ তাকে ছাড়েনি। এসব করতে করতেই রাত হয়ে যায়। পরে ফেরার সময় আমার ভাবি, দুই ভাতিজিকে খুঁজে পাই না। তারা ফারুকের আত্মীয়দের সঙ্গে আমাকে ফেলে রেখেই চলে আসে। এমতাবস্থায় আমি ভাবিকে ফোন দিয়ে বলি আমি সবার নামে মামলা করব। পরে ভাবি ওই গাড়ি থেকে নেমে দুই ভাতিজিকে নিয়ে আমার সঙ্গে আসে।  

তিনি আরও বলেন, জমি নিয়ে তার স্ত্রীর (সফুরা) বোন, তার জামাই ফজলুল হক এবং ছেলে মোজাম্মেলের ঝামেলা চলছিল। ৬ লাখ টাকায় দুই কাঠা জমি আমার ভাই নুরুজ্জামানকে লিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লিখে দেয়নি। এসব নিয়েই তাদের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল।

এই বিরোধের কারণেই তারা আমার ভাইকে মেরে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়েছে। আমরা চাই ঘটনাটি সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

তবে নুরুজ্জামানের স্ত্রী সফুরা বলেন, নুরুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর করব জিয়ারত করতে যাবেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। সকালে উঠে আমাকে ঘুমে রেখেই চলে যান। পরে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি মারা গেছেন, ভিডিওতে আপনারা যা দেখেছেন, আমিও তাই দেখেছি।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগস্ট ভোরে নুরুজ্জামান ওমর ফারুক নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যান। কিন্তু কবর জিয়ারত ও ফুল দেওয়ার অনুমতি কার্ড না থাকায় সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পদ্মা সেতু দিয়ে ফেরার পথে চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে ঝাঁপ দেন নুরুজ্জামান। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।

এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় কোনো ধরনের অভিযোগ আমার জানা নেই। তাছাড়া পদ্মা সেতু থেকে লাফ দেওয়া ব্যক্তির বাড়ি গৌরীপুর কি না, তাও আমার জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।