ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

এক পায়ে লাফিয়ে চলা সেই শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিলেন ইকবালুর রহিম

মোস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
এক পায়ে লাফিয়ে চলা সেই শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিলেন ইকবালুর রহিম সুমাইয়া

দিনাজপুর: তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ১০ বছর বয়সী শিশু সুমাইয়া। দুই বছর বয়সেই অসুস্থ হয়ে এক পা বিকল হয়ে যায় তার।

এর পরেও থেমে নেই তার পথচলা। পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়েই স্কুলে যাওয়া-আসা করে সে। বাসা থেকে তার স্কুলের দূরত্ব দুই কিলোমিটার পথ।

সুমাইয়ার এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসার নিউজ বিভিন্ন মিডিয়ায় এলে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি।

সুমাইয়ার বিষয়ে হুইপ বলেন, মাত্র ১০ বছর বয়সী একজন মেয়ে কি পরিমাণে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ থাকলে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে তা সুমাইয়াকে দেখে বোঝা যায়। তার কষ্টের বিষয়গুলো জানতে পেরে আমি ওকে একটি স্বনিয়ন্ত্রিত হুইল চেয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ঢাকা থেকে অত্যাধুনিক এই হুইল চেয়ারটি তাকে দেওয়া হবে যাতে করে সে নিজেই পরিচালনা করে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে। একই সঙ্গে তার পায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো।

তিনি বলেন, আমি গত ১৩ বছর ধরে সংসদ থেকে প্রাপ্ত ভাতার সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করি গরিব-মেধাবীদের পড়ালেখায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে সম্মানীর সেই অর্থে। আমরা ৫ ভাইবোন প্রতি বছরই পড়ালেখার জন্য ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করি। অভাবের কারণে বা অর্থের অভাবে যাতে করে কোনো শিক্ষার্থী ঝড়ে না পড়ে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কে জানে হয়তো এদেরই মধ্যে এমন কেউ আছে যারা আগামী দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে।

শনিবার (২০ আগস্ট) সুমাইয়ার বাসা চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ টিনের বেড়ার একটি রুম। সেই রুমে তার মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকে সে। প্রতিদিন পিঠে ব্যাগ আর হাতে বই নিয়ে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে রওনা দেয় সুমাইয়া। বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়া বাম পা এখন ডান পায়ের থেকে ছোট হয়ে গেছে। দাঁড়ানো অবস্থায় তার ওই পা আর মাটি স্পর্শ করতে পারে না। লাফিয়ে লাফিয়ে সুমাইয়াকে সব কাজ করতে হয়।

কথা হলে সুমাইয়া বলে, আমি বড় হয়ে চিকিৎসক হবো, যাতে করে আমার মত কেউ চিকিৎসার অভাবে এমন কষ্ট না পায়। তাই কষ্ট হলেও প্রতিদিন এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাই। আমি এখন উত্তর আলোকডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছি। আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করতে চাই।

তার মা সুমি আক্তার বলেন, আমার মেয়ে আগে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারত। তার পায়ের সমস্যার হওয়ার পর প্রায় ৮ বছর ধরে চিকিৎসা করছি, কোনো ফল পাচ্ছি না। অর্থোপেডিক চিকিৎসকেরা বলেছেন, ৩-৫ লাখ টাকা লাগবে মেয়ের পা ভালো করতে। কিন্তু আমার স্বামী তো রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়, কোথায় পাবো এত টাকা। আমার মেয়ের এমন সংবাদ পেয়ে হুইপ ইকবালুর রহিম সাহেব হুইল চেয়ার দিতে চেয়েছেন। চিকিৎসার সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। আমি এজন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদ জানান, পড়ালেখায় সুমাইয়া খুবই ভালো। কোনোদিন স্কুল ফাঁকি দেয় না, কষ্ট করে স্কুলে আসে। আমরা চাই সে মানুষের মত মানুষ হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।