ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরে ঋণের চাপে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
নাটোরে ঋণের চাপে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

নাটোর: নাটোরে আত্মহত্যার প্রবণতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে মানসিক চাপ থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নর-নারী।

হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু আগস্ট মাসে জেলার বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলায় এক দম্পতিসহ ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। আর সদর উপজেলায় ঋণ ও সুদের টাকা না দেওয়ায় এক চা দোকানিকে মারপিটসহ দোকান লুটের ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নাটোর সদর, লালপুর ও বড়াইগ্রাম থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি আগস্ট মাসের ২৬ আগস্ট (শুক্রবার) মানসিক চাপের কারণে বড়াইগ্রাম উপজেলায় গ্যাসের ট্যাবলেট (কীটনাশক) খেয়ে ফারুক হোসেন (৩৫) ও বিথী বেগম (২৬) নামে এক দম্পতি আত্মহত্যা করেছেন। ঋণ ও সুদের চাপে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তারা। এ কারণে সংসারে অশান্তি লেগে থাকতো তাদের। শুক্রবার সকালে স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে গ্যাস ট্যাবলেট (কীটনাশক) খান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রাণ হারান বীথি। স্বামী ফারুককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়।  

এছাড়া গত ৪ আগস্ট ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে নিজ গলা কেটে আত্মহত্যা করেন বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর শহরের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলাম সোহেল (৩৪)। তিনি ওই গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে। বনপাড়া নতুন বাজারে তার একটি মোবাইল ফোনসেটের দোকান ছিল।

পরিবারের দাবি, ঋণের চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে শরীফুল ইসলাম সোহেল। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কারণে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক চাপে ছিলেন। পাশাপাশি এ বিষয় নিয়ে পরিবারের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরাজ করছিল অশান্তি। তাই মানসিক চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সোহেল।  

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, ঋণ ও সুদ কারবারী দিনদিন মানুষকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং আত্মহত্যার মত জঘন্যতম কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে সময়মত উপায় বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অপরদিকে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে জেলার লালপুর উপজেলায় মো. আল আমিন (৩৫) নামে এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (২৮ আগস্ট) সকালে উপজেলার কেশববাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আল-আমিন ওই গ্রামের কালামুদ্দিনের ছেলে।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোনায়ারুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, আলামিন ঋণগ্রস্ত হওয়ায় লোকজন টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তার স্ত্রী সুজেলা খাতুন রাগ করে বাবার বাড়ি চলে যায়। একদিকে স্ত্রী চলে যাওয়া, অপরদিকে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারার মানসিক চাপ সইতে না পেরে পরিবারের অজান্তে নিজ ঘরের চালের সঙ্গে রশিতে ঝুলে তিনি আত্মহত্যা করেন।  

অপরদিকে সুদে টাকা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তির ৫০০ টাকা দিতে না পারায় নাটোর সদর উপজেলায় আব্দুস সাত্তার সরকার (৪০) নামে এক চা দোকানীকে মারপিট করা হয়েছে। পাশাপাশি তার দোকান থেকে টাকাও লুট করা হয়েছে। আর এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, সুদের কারবার ও মারপিটের মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। কেউ থানায় অভিযোগ দিচ্ছেন, কেউ বা স্থানীয়ভাবে গ্রাম্য শালিসে ফায়সালা করছেন। তাই অতি দ্রুত এসব সুদের প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও সুদী কারবারীদের দৌরাত্ম্য প্রতিহত না করলে অকালে নিঃস্ব হবে হাজারো পরিবার। পাশাপাশি এ রকম আত্মহত্যার মতো ঘটনা আরও ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, জেলার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র সমবায় সমিতি গড়ে তুলে সুদের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে অসাধু ব্যক্তি ও কতিপয় প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে তথা সুদী কারবারীদের দৌরাত্ম্যও চোখে পড়ার মতো। এসব বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তা না করা হলে এভাবেই একের পর প্রাণ ঝরে যাবে সুদ ও ঋণের বেড়াজালে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।