ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতনদের অবহেলা, সুযোগ নেন অধস্তনরাও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২
সরকারি কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতনদের অবহেলা, সুযোগ নেন অধস্তনরাও

মেহেরপুর: মুজিবনগর উপজেলার সরকারি কার্যালয়গুলোয় নানা অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। এসবের মধ্যে প্রথমটি হলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

তারা নির্ধারিত সময় অফিসে আসেন না। আবার দেরিতে এসে আগে চলে যান। অধস্তন কর্মকর্তারাও নিয়ে থাকেন এ সুযোগ। বাদ যান না কর্মচারীরাও। বিভিন্ন অজুহাতে অফিস না করার অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।

ঊর্ধ্বতনদের অবহেলার সুযোগ নিয়ে অধস্তন-কর্মচারীরাও নিয়মিত বিভিন্ন অনিয়ম করে থাকেন। অনেকে কার্যালয়ে আসেন না। অনেকে এসেও সরকারি কাজ ফেলে রেখে বিভিন্ন কাজ করেন।

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এসব অনিয়ম দেখা যায়। সোমবারও (১২ সেপ্টেম্বর) একই অবস্থার কথা জানা গেছে।

রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সেটি তালাবন্ধ। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর সেখানে একজন আসেন। নিজেকে পিয়ন পরিচয় দিয়ে জানান জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ‘মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন’। এরপর তিনি অফিসে আসবেন।

জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তাকে না পেয়ে কার্যালয়ের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার খোঁজ করা হয়। কিন্তু তিনি অফিসেই ছিলেন না।

মুজিবনগরের যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রকিব উদ্দীনের অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার কার্যালয়ে ছিলেন একজন, যিনি জানাতে পারেননি কর্মকর্তা রকিব কেন অফিসে আসেননি, তিনি কোথায় বা কী করেন। পরে রকিবের মোবাইলে কল করা হয়। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি আজকে জেলা অফিসে ছিলাম। সেখান থেকে বাসায় এসেছি। অফিসে যাওয়া হয়নি।

সরকারি কর্মকর্তাদের কোথাও যেতে হলে মুভমেন্ট খাতায় সই করে যেতে হয়। কিন্তু এ কর্মকর্তা সেটি মানেননি। এও জানান, কেউ এ নিয়ম মানেন না।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান। তার অফিসে আসার কথা সকাল ৮টায়। তখন থেকেই জনগণের সেবায় কাজ শুরুর কথা। কিন্তু সকাল ১০টা পর্যন্তও তিনি নিজ কার্যালয়ে ছিলেন না। এ সময় তার কক্ষের বাইরে বহু সেবা গ্রহীতা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক যখন (সকাল ৯টা) নির্বাচন কর্মকর্তার সামনে, তখনও তার কক্ষের দরজার তালা খোলা হয়নি।

একই সময় তালাবন্ধ ছিল মুজিবনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুজ্জামানের কক্ষ। নিজে তো অফিসে আসেননি, তার অধস্তন কর্মকর্তাকে দিয়েও সেটি পরিচালনা করান না। বরং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তার কার্যালয় সামাল দিচ্ছিলেন।

মোবাইলে কথা হলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুজ্জামান বলেন, আমি মুজিবনগরে এবং জেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। তাই প্রতিদিনই মুজিবনগরে অফিস করা সম্ভব হয় না। কাজ থাকলে যাই, তা না হলে মেহেরপুরে অফিস করি।

সকালে সরকারি অফিস শুরুর সময়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানের কার্যালয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ সময় তিনি নাকি ঘুমচ্ছিলেন। এমন অভিযোগ সেবা গ্রহীতাদের। একই অভিযোগ রয়েছে উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক মো. শাহিনুজ্জামানের বিরুদ্ধেও।

তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার এনাম আহমেদ সহজের নিয়মিত ও নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসার রেকর্ড নেই। রোববার তাকে সাড়ে ৯টার আগে অফিসে পাওয়া যায়নি বলে তথ্য মিলেছে। সোমবারও তিনি এ সময় অফিসে যান।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা কাউসার আলীর কক্ষের দরজা খোলে না। তালাবন্ধ থাকে সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালামের কক্ষটিও। উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মো. পলাশ আলীও অফিসে আসেন না ঠিক মতো। সেবা গ্রহীতাদের অনেকের অভিযোগ, মুঠোফোনে এসব সরকারি কর্মকর্তারা সকলে ফোন করতে মানা করেন। তার ঘুমের ব্যাঘাত হয়।

সোমবার সকাল ৮টার সময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রবের কার্যালয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মামুনুর রশিদের কার্যালয় খোলা থাকলেও তিনি ছিলেন না। তার এক অফিস সহায়ক বলেন, স্যার এখনও আসেননি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়ে বর্তমানে ভারত অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

একমাত্র স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তা প্রকৌশলী শাহীন আক্তার ও তানিয়া খন্দকারকে নির্ধারিত সময় অফিসে পাওয়া যায়। কিন্তু গণমাধ্যমের সঙ্গে তারা কোনো ব্যাপারে কথা বলতে চাননি।

মাঠ-পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকার নির্ধারিত সকাল ৮টার মধ্যে অফিস কক্ষে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এমন কোনো চিত্রই দেখা যায় না মুজিবনগর উপজেলার সরকারি অফিসগুলোয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত অনিয়ম তো করেনই, অধস্তনারও নিয়ম মানেন না। তাদের দেখা-দেখি এসব সুযোগ নেন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও।

স্থানীয় বহু সেবাগ্রহীতা প্রতিনিয়ত এসব সরকারি কার্যালয়ে সেবা নিতে গিয়ে ফিরে আসেন। আজ এ সমস্যা, কাল ওই সমস্যা জানিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। কেউ কেউ জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে কোনো কাজ করাতে পারেন না তারা। সরকারি কর্মকর্তারা সকালে নির্ধারিত সময় অফিসে এসে কাজ শুরু করবেন, এটা নিয়ম। কিন্তু তারা কেউ ঘুমান, কেউ অন্যত্র থাকেন। এসব অনিয়ম দেখার কেউ নেই। তাদের ঘুম ও অন্যান্য কাজের জন্য কতকাল নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হবেন- প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।

এসব ব্যাপারে বাংলানিউজ কথা বলে মুজিবনগরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওবায়দুল্লাহ। তিনি বলেন, আমি এ জেলায় নতুন এসেছি, সদর উপজেলায় যোগ দিয়েছি। গত ৮ সেপ্টেম্বর মুজিবনগরের ইউএনও হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে যোগ দেই। রোববার আমার দায়িত্বের প্রথম দিন। আমি সেখানে যেতে পারিনি। তবে, যেসব অভিযোগ রয়েছে- সবগুলোই আমি যাচাই-বাছাই করবো। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে আসা-যাওয়া করা উচিৎ। এ বিষয়টি নিয়ে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।