পঞ্চগড়: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে যোগ দিতে গিয়ে স্ত্রী রুপালী (৩৫) ও ছোট সন্তান দিপনকে (৩) নিয়ে অন্যদের সঙ্গে নৌকায় পার হচ্ছিলেন করতোয়া নদী। কিন্তু এই পূজাই জীবনের শেষ পূজা হয়ে দাঁড়ালো রুপালী ও ভূপেন ওরফে পানিয়া (৪০) দম্পতির।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে করতোয়া নদীতে নৌকা ডুবে ওই দম্পতির মৃত্যু হয়। তবে এসময় তাদের সঙ্গে থাকা শিশু দিপনকে স্থানীয়দের সহায়তায় জীবিত উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যালে নেওয়া হয়।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৭টার সময় রুপালীর মরদেহ তার নিজ বাড়ি ছত্রশিকারপুর গ্রামে নেওয়ার পর দিপনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেওয়া হয়। দুর্ঘটনার একদিন পর দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় রুপালীর মরদেহ উদ্ধার করা হলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে পানিয়া।
পানিয়া দম্পতির অপর দুই ছেলের দিপক (১৪) ও রিপন (৭)।
এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলে ভূপেন ওরফে পানিয়াকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তার বাবা মদন মিয়া। নিখোঁজ পানিয়া এলাকায় দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
মরদেহ রাতে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। খবরে পেয়ে রাতে ওই বাড়িতে গেলে দেখা যায় কান্না ও আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে আছে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তবে পানিয়ার মরদেহ দ্রুত উদ্ধারে প্রশাসনের সহায়তা চান স্থানীয়রা।
নিহতের চাচা ভবতোষ বাংলানিউজকে বলেন, এলাকার মধ্যে একটি দরিদ্র পরিবার তাদের। রুপালী স্বামীর সঙ্গে তিন সন্তানসহ শ্বশুর শ্বাশুড়িকে নিয়ে থাকতো। এমন একটি দুর্ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে গেছে পুরো পরিবারটি।
প্রতিবেশী বিমল চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, বাবা মাকে হারিয়ে তিন সন্তান পুরো এতিম হয়ে গেল। এই মুহূর্তে তাদের কোনো উপার্জনকারী নেই। তাদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হলে পরিবারটি কিছুটা স্বস্তি পাবে।
এদিকে রাত সাড়ে ৮টার সময় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পঞ্চগড়ের বোদা, দেবীগঞ্জ, দিনজপুরের বীরগঞ্জ, খানসামাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সোমবার ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে প্রশাসন। এ নিয়ে পঞ্চগড় জেলায় নিহতের সংখ্যা দাড়ালো ৫০ জনে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
আরএ