ঢাকা, সোমবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চুয়াডাঙ্গায় ১৫ দিনে ৪ খুন!

জিসান আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২২
চুয়াডাঙ্গায় ১৫ দিনে ৪ খুন!

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় ১৫ দিনের ব্যবধানে চারজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। জেলার আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা থানা এলাকায় এসব হত্যার ঘটনা ঘটে।

 

এসব হত্যার পেছনের কারণ ভিন্ন হলেও সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ধরন প্রায় একই রকম। সব হত্যা কাজেই ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। কাউকে কুপিয়ে আবার কাউকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।  

সবশেষ  রোববার (২ অক্টোবর) দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ৮৫ বছর বয়সী সব্বত আলী নামে এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত এবং শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের।  

একের পর এক খুনের ঘটনায় উৎকণ্ঠা বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, পূর্ব বিরোধ, তুচ্ছ ঘটনা বা এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে।

এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আল ইমরান (২২) প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন। আল ইমরান হত্যার ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর নিহত ব্যক্তির বাবা আবদুল জলিল বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি মাসুদ রানাকে (২৫) ওই দিনই গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। নিহত আল ইমরান ছিলেন আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। উপজেলা শহরের গোবিন্দপুরের নিজ বাড়ি থেকে তাকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। ওই ঘটনা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ছয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তবে একজনকে গ্রেফতার করলেও বাকি আসামিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যার কারণ পূর্ব বিরোধ বলা হলেও প্রকৃত কারণও এখনো সামনে আসেনি।

ইমরান হত্যার সাতদিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলার পুরাতন বাজার এলাকার নিজের তালাবদ্ধ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বৃদ্ধ দম্পতি নজির উদ্দীন ও ফরিদা খাতুনের রক্তাক্ত মরদেহ। পরদিন ওই ঘটনায় নিহতের একমাত্র সন্তান ডালিয়ারা পারভীন শিলা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের চারদিনের মাথায় হত্যায় সম্পৃক্ত চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সম্মেলনে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন জানিয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া শাহাবুল ছিলেন নজির উদ্দিনের পূর্বপরিচিত। দীর্ঘদিন নজির উদ্দিনের ব্যক্তিগত শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মিনি ট্রাকের চালক ছিলেন শাহাবুল। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে শাহাবুল সঙ্গী হিসেবে রাজীব ও বিদ্যুতকে সঙ্গে নিয়ে ক্রেতা সেজে বাড়িতে ঢুকে পরিকল্পনা অনুযায়ী খুন করেন। খুনের পর বাড়িতে রাখা ৪৩ হাজার টাকা, দুটি ব্যাগ ও নজির উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে যান তারা। পুলিশের অভিযানে হত্যার সময় আসামিদের পরনের জামা-কাপড়, ফরিদা খাতুন ও নজির উদ্দিনের টাকার ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া খুনের সময় লুট করা টাকাপয়সা ও একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

তবে এ ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে উপজেলাবাসীর মধ্যে। অনেকেই বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় কোনো ঘটনা থাকতে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কিছু টাকার জন্য দুই-দুটি হত্যার ঘটনা এত স্বাভাবিক না। মাস্টারমাইন্ড শাহাবুলের পেছনে আরও বড় মাস্টারমাইন্ড থাকতে পারে।
 
পরপর এসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বলেন, আলমডাঙ্গায় দম্পতি হত্যার ঘটনাটি ছিল ক্লু-লেস। পুলিশের তড়িৎ পদক্ষেপে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা হত্যার কারণ উদঘাটন এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনতে পেরেছি। একইভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আল ইমরান হত্যার ঘটনাটিও পুলিশ সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। দ্রুতই সব আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা  হবে। এছাড়া দামুড়হুদায় বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর বলা যাবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা। তবে এ ঘটনার পেছনের রহস্যও খুঁজে বের করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।