ঢাকা, সোমবার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ মে ২০২৪, ১৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের বলি শরীফ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের বলি শরীফ গ্রেফতার তিন আসামি

ঢাকা: কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরে গলা কেটে অটোরিকশা চালক হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার মূল আসামিসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার গভীর রাতে রাজধানীর চকবাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন—মো. নিলয় মিয়া (২০), ইব্রাহিম মিয়া ওরফে বাদল (১৯) এবং হৃদয় মিয়া (২৩)।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩-এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শরীফ মিয়া (২৮) কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার পৌরশহরের মুক্তার মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় একজন মিশুকচালক। তিনি প্রতিদিনের মতো গত ১৩ অক্টোবর বিকেলে তার গাড়িটি নিয়ে ভাড়ায় চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। ওই দিন তিনি আর বাড়ি না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা লোকমুখে জানতে পারেন যে, কুলিয়ারচর থানাধীন ছয়সূতী ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের শান্তিপুর বাঘমারার বন্দ নামক স্থানে এক অজ্ঞাতনামা যুবকের গলা কাটা লাশ পাওয়া গেছে।

এই সংবাদ পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন লাশটি কুলিয়ারচর থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। পরে তারা হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহটি নিখোঁজ শরীফ মিয়ার বলে শনাক্ত করেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শরীফ মিয়ার ভাই মো. শিপন মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভুক্তভোগী শরীফের স্ত্রীর সঙ্গে গ্রেফতার আসামি নিলয়ের দীর্ঘদিনের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। পরে শরীফের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় নিলয় এবং তার প্রেমিকার মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভুক্তভোগী শরীফের প্রতি ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে গ্রেফতার আসামি নিলয়, হৃদয় এবং বাদল মিলে তাকে খুন করার নীলনকশা সাজান। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তারা একটি মাজারে যাওয়ার কথা বলে শরীফের মিশুক গাড়িটি ভাড়া করে যাত্রা শুরু করেন। তারা ভুক্তভোগীকে মাটিকাটা গ্রামের শান্তিপুর বাঘমারার বন্দ নামক স্থানে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে আসামিরা শরীফকে তার গাড়িটি দিয়ে দিতে বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বললে শরীফ অস্বীকৃতি জানান। এরপর শরীফকে তারা বেধড়ক মারপিট করেন।

মারামারির এক পর্যায়ে হৃদয় এবং নিলয় ধারালো ছুরি দিয়ে শরীফকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকেন এবং বাদল ভুক্তভোগীর বুকের ওপর চড়ে বসে ধারালো ছুরি দিয়ে শরীফকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং মিশুক গাড়িটি নিয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

র‌্যাব-৩-এর সিও বলেন, আসামিরা মোবাইল ফোনটি তাদের বন্ধু মুরছালিনের কাছে বিক্রি করেন এবং মিশুক গাড়িটি বাঁশগাড়ি এলাকায় বাদলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে তিনজন একযোগে ভৈরব থেকে বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।  

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নিলয় ও হৃদয় বেশ কিছুদিন ধরেই ওই এলাকায় গিয়ে অবস্থান করেন এবং বাদলকে সঙ্গে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা চূড়ান্ত করেন। ঘটনার পর তিনজনই ঢাকার উদ্দেশে পালিয়ে আসেন এবং লালবাগে তাদের প্রাক্তন কর্মস্থল জুতার ফ্যাক্টরিতে আশ্রয় নেন। এভাবেই তারা ঘটনার পর থেকে লালবাগ এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন।

গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র‌্যাব-৩-এর সিও।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।