ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ইতিহাসের সাক্ষ্য প্রমাণের সংগ্রহশালা জাতীয় জাদুঘর

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২২
ইতিহাসের সাক্ষ্য প্রমাণের সংগ্রহশালা জাতীয় জাদুঘর

ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষ্য প্রমাণের সংগ্রহশালা বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। শুধু ইতিহাস নয়, এতে রয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন, যা যে কোনো মানুষের মনে দেশ ও জাতির সম্পর্কে জানার আরও আগ্রহ সৃষ্টি করবে।

তাই ছুটির দিনে অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রের মতো জাতীয় জাদুঘরেও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের সংকট কাটিয়ে আবারও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে এর প্রাঙ্গণ। দলবেঁধে দর্শনার্থীরা আসছেন পরিবার, স্বজন ও বন্ধুদের নিয়ে। ৪০ টাকায় টিকিট কেটে জাদুঘরে প্রবেশ করে হাতের ডানে সঙ্গে থাকা ব্যাগ জমা দিয়ে ঢুকতে হয় মূল ভবনে। এর প্রবেশ মুখে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশালাকৃতির প্রতিকৃতি। বঙ্গবন্ধুর এই বিশাল ভাস্কর্য শুরুতেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষ করে শিশুদের চোখে মুখে বিশাল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এক বিস্ময় দেখা যায়। তাই তো অনেক শিশুই সেই প্রতিকৃতির পাদদেশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে।

জাদুঘরের মূল ভবনের দোতলায় বিভিন্ন নিদর্শন সাজানো রয়েছে। চক্রাকারে দর্শনার্থীরা এসব ঘুরে ঘুরে দেখেন। একই ভাবে রয়েছে তৃতীয় এবং চতুর্থ তলায় ইতিহাসের বিভিন্ন নিদর্শন। দর্শনার্থীরা জাদুঘরে প্রথম দেখতে পাবেন বিশালাকৃতির বাংলাদেশের ম্যাপ। ম্যাপের পাশে থাকা সুইচে চাপ দিয়ে আগত দর্শনার্থীরা খুব সহজেই ম্যাপে নিজ জেলা দেখতে পারেন। দেশের ৬৪টি জেলার জন্য রয়েছে আলাদা সুইচ, প্রত্যেক সুইচের নিচেই রয়েছে জেলাগুলোর নাম।

ম্যাপ দেখার পর হাতের ডান দিক থেকে ভ্রমণ শুরু করলে দর্শনার্থীরা নিজেকে আবিষ্কার করবেন গভীর সুন্দরবনে। বিভিন্ন কৃত্রিম গাছপালা এবং পশুপাখি দিয়ে সুন্দরবনটি সাজানো হলেও মৃদু আলোক সজ্জায় আসল বনে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি দেবে। এরপরেই রয়েছে দেশিয় বিভিন্ন মাছ, পশু-পাখির সংগ্রহ। পশু-পাখিগুলো বিশেষ কায়দায় সংরক্ষণ করে রাখা হলেও ছিল নিষ্প্রাণ। তবে তাতে শিশুদের কোনো অভিযোগ নেই। কাছ থেকে বিভিন্ন পশু-পাখি দেখতে পেয়েই তারা খুশি। শিশুদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল বড় আকারের তিমির ফসিল।

জাদুঘরে র‌য়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক বিশাল সম্ভার। রয়েছে মাটির বড় মটকা, ধান ভাঙার ঢেঁকি, বিভিন্ন ধরনের নৌকার ছোট প্রতিকৃতি, বাঁশ-পাটের তৈরি দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র। যার কিছু কিছু বিলুপ্ত এবং কিছু রয়েছে বিলুপ্তের পথে। এ নিদর্শনগুলো অনেক দর্শনার্থীদের কাছে নতুন দেখা মনে হলেও বয়স্ক দর্শনার্থীদের জন্য হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতি।

জাদুঘরের তৃতীয় তলা যেন এক খণ্ড ইতিহাস। ইতিহাস থেকে উঠে আসা বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে সাজানো এ অংশে দর্শনার্থীরা স্বচক্ষে দেখতে পায় ইতিহাসের বিবর্তন। দশম শতাব্দী থেকে শুরু করে উনিশ শতকের শুরুর দিকে হারিয়ে যাওয়া রাজা ও জমিদারদের আসবাবপত্র, জামা-কাপড়, তৈজসপত্র, মুদ্রা, অলংকার, যুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম দেখলে মনে হবে কতটা সমৃদ্ধ ছিল অখণ্ড ভারতবর্ষ। এছাড়াও রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খুঁজে পাওয়া নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এসকল নিদর্শনের ওপর খচিত নানা নকশা ও লেখা প্রকাশ করে সেই সময়কার সমাজ ব্যবস্থা, রুচিবোধ এবং জাতিগত ইতিহাস।

ঐতিহ্য ও অতীত ইতিহাস ছাড়াও জাদুঘরে রয়েছে বাংলাদেশের গৌরবময় অর্জন স্বাধীনতার বিভিন্ন নিদর্শন। স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার ভিত তৈরি থেকে শুরু করে দেশ স্বাধীন হবার সমস্ত ঘটনাগুলো জ্যান্ত হয়ে রয়েছে দেশি-বিদেশি চিত্রগ্রাহকদের ক্যামেরায় তোলা ছবি গুলোয়। এছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। রয়েছে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ও বুদ্ধিজীবীদের গায়ে জড়ানো কাপড়, ব্যাগ, চশমা  এবং ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র। যা দর্শনার্থীদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত করে। শিশু দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়াবে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে।

জাতীয় জাদুঘরে আগত দর্শনার্থীদের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মিরপুর বেড়িবাঁধ থেকে আসা পোশাক শ্রমিক ইকরাম বাংলানিউজকে বলেন, অনেকের কাছে শুনেছি যাদুঘরে নাকি পুরানো অনেক কিছু রয়েছে, সেগুলো দেখতে এসেছি। এই প্রথম আসা বন্ধুদের নিয়ে।

জাদুঘরের কোন জিনিসটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবই ভালো লাগছে। তবে রাজাদের জিনিসপত্র দেখে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। তরবারি, কামান ছিল। রাজাদের আমলের পুরনো খাট দেখতে ভালো লাগছে।

তবে কিছু কিছু দর্শনার্থী প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর পাশে তাদের পূর্ণ ইতিহাস লিখে দেওয়ার সুপারিশ করেন। দর্শনার্থী সাজেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পুরানো যেই দেব-দেবীর মূর্তি এবং অন্যান্য হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার নিদর্শন আছে সেগুলোর পাশে পূর্ণ ইতিহাস থাকলে ভালো হয়। এখানে শুধু কোথা থেকে উদ্ধার হয়েছে এবং কত সালের দিকে সেটা দেওয়া। পাশাপাশি কার সময়কার এগুলো দিলেও ভালো হতো।

জাদুঘর আগের তুলনায় আরও উন্নত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশ যাওয়ার আগে একবার আসছিলাম জাদুঘরে। তখনকার তুলনায় এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আরও গোছানো হয়েছে জায়গাটা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২২
এমকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।