কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় সাত মাস বয়সী শিশু নুরুন্নবী হত্যা মামলায় কল্পনা বেগম (৪০) নামে এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান খান এ রায় দেন। এ সময় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কল্পনা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত কল্পনা কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শম্ভুপুর বড়কান্দা এলাকার মেরাজ মিয়ার স্ত্রী।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২১ জুলাই দুপুরে সাত মাস বয়সী নুরুন্নবীকে নিজ বসতঘরে ঘুম পাড়ান তার মা শিল্পী বেগম। এরপর তিনি বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে যান। গোসল শেষে ঘরে ফিরে দেখেন তার ছেলে বিছানায় নেই। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে কল্পনাদের বাড়িতে খুঁজতে যান তিনি। গিয়ে দেখেন তারাও বাড়িতে নেই।
এ ঘটনার তিনদিন পর ২৪ জুলাই সকালে প্রতিবেশী আতর মিয়ার বাড়ির দক্ষিণ পাশে ময়লার স্তুপে ওই শিশুটির মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
পরদিন ২৫ জুলাই দাফন শেষে শিশুটির মা জানতে পারেন চাচি শাশুড়ি কল্পনা বেগম ও তার ছেলে নাহিদ মিয়া বিক্রির উদ্দেশ্যে শিশুটিকে চুরি করেছিল। কিন্তু বিক্রি করতে না পেরে তারা শিশুটিকে হত্যা করে ময়লার স্তুপে ফেলে দেন। পরে ২৬ জুলাই ভৈরব থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে বিষয়টি সাধারণ ডায়রি (জিডি) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি শিশুটির মা শিল্পী বেগম বাদী হয়ে কল্পনা বেগম ও তার ছেলে নাহিদ মিয়ার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি আসামি কল্পনা বেগমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হাবিবুর রহমান মামলার তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৬ জুন কল্পনা বেগমকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে সোমবার বিকেলে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান খান এ রায় দেন।
এতে রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন কিশোরগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (ভারপ্রাপ্ত পিপি) অ্যাডভোকেট মো. আবু সাঈদ ইমাম
এবং আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এবিএম লুৎফর রাশিদ রানা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২২
এফআর