ঢাকা, সোমবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতু: চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাতায়াত বেড়েছে

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
পদ্মা সেতু: চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাতায়াত বেড়েছে

মাদারীপুর: পদ্মা সেতু চালুর আগে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ঢাকা যাওয়া ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাথার বোঝা! হঠাৎ কেউ অসুস্থ্য হলে ঢাকার কোনো হাসপাতালে যথা সময়ে পৌঁছানো ছিল ভীষণ কষ্টসাধ্য বিষয়।

পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে অসংখ্য রোগীদের পড়তে হতো চরম বিপাকে।

নদী পার হতে ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা কিংবা ফেরিতেই এ্যাম্বুলেন্সে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ঢাকা এড়িয়ে ফরিদপুর বা বরিশাল মেডিকেলেই মাদারীপুর অঞ্চলের রোগীদের যাতায়াত ছিল বেশি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া 'ডাক্তার দেখাতে' ঢাকামুখী হতে চাইতো না সাধারণ মানুষ।

আর এখন পদ্মা সেতু চালুর পর এই দিক দিয়ে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে এখন যে কোনো সময়ই ঢাকা যাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। আবার স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক বা বেসরকারী হাসপাতাল ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকও সহজে আসতে পারছেন।

সাধারণ মানুষরা জানান, মাদারীপুর ঢাকার খুব কাছে হলেও সেতু চালুর আগে রাজধানীতে যাওয়া ছিল দূর্ভোগের যাত্রা। পদ্মা নদীর ঘাট এলাকায় দূর্ভোগ মাথায় নিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ তেমন ঢাকামুখী হতে চাইতো না। রোগী নিয়ে ঢাকা যাওয়া-আসা ছিল চরম ভোগান্তির। যে কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য 'ভালো' ডাক্তার দেখাতে ঢাকা যাওয়া হয়ে উঠতো না। কিন্তু সেতু চালুর পর ঢাকায় যাওয়া যখন সহজ হয়ে গেলো, তখন এই এলাকার মানুষ ডাক্তার দেখাতে সরাসরি ঢাকা চলে যাচ্ছেন। সিরিয়াল দিয়ে বিকেলে রওনা হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আবার রাতেই ফিরে আসতে পারছেন তারা। এখন চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যোগাযোগ বেড়েছে।

জেলার বিভিন্ন ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে সপ্তাহের নির্ধারিত দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার ভালো ডাক্তাররা আসছেন। তাছাড়া মাদারীপুর, শিবচরে বাড়ি এমন ডাক্তারও এখন নিয়মিত আসছেন। যে কোনো চিকিৎসার জন্য এখন হুটহাট করেই রোগীরা ঢাকা যাচ্ছেন।

ষাটোর্ধ্ব জাহানারা বেগম নামে শিবচরের এক নারী বলেন, তিন-চার মাস পর পর আমার চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে গিয়ে ডাক্তার দেখাই। আগে ঢাকা যাওয়ার কথা মনে এলেই অসুস্থ্য লাগতো। এখন ঢাকা গিয়ে ডাক্তার দেখানো সহজ হয়ে গেছে। বাড়ির কাছ থেকে গাড়িতে উঠে বসলেই ঢাকা গিয়ে নামতে পারছি। আমার মতো অসংখ্য রোগী এখন ঢাকা যেতে এক ধরনের প্রশান্তি পাই।

লাবনী আক্তার নামে এক কলেজছাত্রী বলেন, ইমার্জেন্সি রোগী নিয়ে ঢাকা যাতায়াতও এখন সহজ হয়ে গেছে। তাছাড়া বাড়িতে বসে ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে বিকেলে গিয়েই ডাক্তার দেখানো যাচ্ছে। সাধারণ চিকিৎসার জন্যেও অনেকে এখন ঢাকা যাচ্ছেন।

আব্দুল হক নামের এক ব্যক্তি বলেন, ঢাকায় আমাদের এক রাত থাকতে হলে হোটেলে উঠতে হয়। রোগী নিয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয়। এখন ইচ্ছে করলে চিকিৎসার কাজ সেরে রাতের মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসতে পারছি। ঢাকা যেতে মাত্র ৫০ মিনিট লাগে এখন!

পদ্মা সেতুর জাজিরা টোল প্লাজায় কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, ছুটির দিনগুলোতে সেতুতে যানবাহনের চাপ বাড়ে। প্রতি সপ্তাহেই ছুটির দিনে ব্যক্তিগত যানবাহনের বাড়তি চাপ দেখা যায়।

ঢাকাগামী আনন্দ, প্রচেষ্টা, স্বাধীন এক্সপ্রেসসহ একাধিক গাড়ির সুপারভাইজার জানান, শুক্র ও শনিবার এবং অন্যান্য দিন দুপুরের দিকে চিকিৎসা সংক্রন্ত কাজে ঢাকাগামী অনেক যাত্রী পাওয়া যায়। তাদের অনেকেই আবার রাতে ফিরে আসেন।

পদ্মা সেতু চালুর পর নৌ-পথের ভোগান্তির সমাপ্তি হয়েছে। ঢাকা যাওয়া-আসায় মাদারীপুরবাসীর সময় লাগছে মাত্র ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। জেলার শিবচর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে মাত্র ৪৫-৫০ মিনিট। তবে দুরত্ব অনুযায়ী বাসের ভাড়া বেশ অতিরিক্ত বলে অভিযোগ করেন সাধারণ যাত্রীরা। ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা গুনতে হয় যাত্রীদের। বাস ভাড়া ১৫০ টাকা হলে সাধারণ যাত্রীদের জন্য সহনীয় হতো বলে জানান তারা। পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানোরও দাবি জানান সাধারণ যাত্রীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।