ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সোনালী আমনের বাম্পার ফলনে স্বপ্ন-শঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২২
সোনালী আমনের বাম্পার ফলনে স্বপ্ন-শঙ্কা

সুনামগঞ্জ: চলতি বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছিল। জেলার সদরসহ তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলায় এবারের বন্যা ক্ষত বসিয়েছিল বেশ বড়সড়।

সেটি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া জেলার কৃষকরা। তাই তারা এখন স্বপন বুনছেন সোনালী আমন ধানে। তবে, আছে শঙ্কাও।

উপজেলাগুলোর ফসলি জমিতে এবার আমনের ফলন খুব ভালো। জমিগুলোর ধান পেকে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। কিন্তু কৃষকরা বলছেন, সঠিক মূল্য না পেলে তাদের স্বপ্ন ভেস্তে যাবে। তারা যাতে মূল্য পান, সে ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা চান তারা। সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান কেনা ও বাজার তদারকির দাবিও করেছেন তারা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ধানী জমিতে পাকা ধামের মেলা দেখা গেছে। কোনো কোনো জমির ধান কাটা হচ্ছে। কিছু জমির ধান কাটার পর মাড়াই আর শুকানোর কাজ চলছে।

এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ১০০ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়। গত ১৬ নভেম্বর (১ অগ্রহায়ণ) থেকে শুরু হয়েছে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আমন ধান কাটা উৎসব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ সদরে ১১ হাজার ৬১০ হেক্টর, তাহিরপুরে ৬ হাজার ৩৩৫ হেক্টর, ধর্মপাশায় চার হাজার ৫৭০ হেক্টর, জামালগঞ্জে চার হাজার ৫৪৫ হেক্টর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৪ হাজার ৬২৫ হেক্টর, ছাতকে ১২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর, জগন্নাথপুরে ৯ হাজার ৫৫৫ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুরে ৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর, শান্তিগঞ্জে চার হাজার ২১০ হেক্টর, দিরাইয়ে দুই হাজার ২২৫ হেক্টর, শাল্লায় দুই হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। জেলায় এবার সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে ব্রি-৪৯ ও বিআর ২২ জাতের ধান।

কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ঋণ করে আমনের চাষ করেছি। আমনের ভালো ফলন হয়েছে এবার। ঋণগ্রস্ত অনেক কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। মাত্রই ধান কাটা শুরু হয়েছে, তাই বাজার দরের বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে বাজারে এখনও ধানের দাম ভালই।

অপর কৃষক সাদেক মিয়া বলেন, বন্যায় পর অনেক কষ্ট করেছি। ঋণ করে আমন ধানের চাষাবাদ করেছি। এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর একটা পথ হয়েছে। কিন্তু ন্যায্যমূল্য না পেলে নসব কষ্ট বৃথা যাবে।

জেলার তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দোলা বলেন, আমন আবাদে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত বছরের চেয়ে এ বছর চাষাবাদ বেশি হয়েছে। হালকা বৃষ্টিপাত হওয়ায় ক্ষতিকর পোকা মাকড়ের উপদ্রব ছিল না। তাই ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে, যা অতিক্রমও করতে পারে। কৃষকরা সরকারি ভর্তুকিতে নেওয়া মেশিনে ধান কাটছে। তাদের কাছ থেকে সরকার ন্যায্যমূল্যে আমন ধান সংগ্রহ করবে।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ১০০ হেক্টরের বেশি জমির আমন ধান কাটা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সম্ভাবনা রয়েছে।  কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।