ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

স্বপ্ন এখন নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের

রাকিন মোনতাসিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৫
স্বপ্ন এখন নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের

দেশে দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা শাসনের নামে অপশাসন, শোষণ ও নিষ্পেষণের অবসান হয় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ মুক্তি পায় এক ভীষণ দুর্দশা  থেকে।

বাংলাদেশের মানুষ আবারও হাসতে শেখে। আবারও স্বপ্ন দেখার সাহস পায়।

সেই স্বপ্ন নতুন এক বাংলাদেশের। সংস্কার হওয়া একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের।

স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের রাজনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, কয়েক বছর পর পরই আমাদের ওপর স্বৈরশাসনের বোঝা জেঁকে বসেছে বা বসার চেষ্টা করেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় সংবিধানের পরস্পরবিরোধী কিছু অনুচ্ছেদ ও ধারাকে।

সংবিধানের তৃতীয় ভাগে (মৌলিক অধিকার) ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদের ১ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। ’ এই অনুচ্ছেদেরই ২(ক) উপ-অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল। ’ কিন্তু তার সম্পূর্ণ বিপরীত বর্ণনা আছে সংবিধানের পঞ্চম ভাগের (আইনসভা) ১ম পরিচ্ছেদে। ৭০(খ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি—সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোট দান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে। ’ 

অর্থাৎ সংসদে যদি কোনো বিল বা আইন পাস করা নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট দলের সব সংসদ সদস্যকে একই ভোট দিতে হবে। তা না হলে বাতিল হবে তাঁর সংসদ সদস্য পদ, যা মূলত সংসদ সদস্যদের ভোটাধিকার ও নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে। এই অনুচ্ছেদের জন্য ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও সব ক্ষেত্রেই সংসদ সদস্যরা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে বা দলের অধিকাংশের মতের সঙ্গে সহমত জ্ঞাপন করতে বাধ্য হন। এই অনুচ্ছেদ মূলত স্বৈরাচার গঠনে প্রধান সহায়ক।

শিক্ষার্থীএকটি দেশে জনগণের ভোটে একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের যদি নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে, তাঁর ওপর যদি অন্যের মত চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেই দেশের সাধারণ জনগণের মত প্রকাশ তো আরও অনেক তুচ্ছ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

তাই সংবিধানের এই ধারার সংস্কার করা এবং সব সংসদ সদস্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত অবশ্যই করতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, একই ব্যক্তি যেন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা যুগ যুগ ধরে পরিবারকেন্দ্রিক হয়ে আসছে। এর পরিবর্তন ঘটা জরুরি। রাষ্ট্রের ক্ষমতা যদি পরিবারকেন্দ্রিকই হয়, তাহলে বাংলাদেশ আসলে গণতান্ত্রিক দেশ নাকি প্রকৃতপক্ষে প্রকারান্তরে রাজতন্ত্র, তা নিয়ে ভাবনার উদ্রেক হয়। রাষ্ট্রক্ষমতাকে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব যেন কেউ জন্মসূত্রে না পায়। বরং নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে এবং দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করে যেন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে।

নতুন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কোনো পক্ষই যেন নির্বাচনী এলাকা মর্জিমাফিক পরিবর্তন করে অবৈধ সুবিধা ভোগ করতে না পারে, সে বিষয়ে তীক্ষ নজর রাখতে হবে। নির্বাচনের আগ দিয়ে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার নোংরা রাজনীতিকে বিদায় জানাতে হবে।  কোনো পক্ষই যেন এভাবে ভোট বাগাতে না পারে, তা আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। নতুন বাংলাদেশে আমরা অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য লোককে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। দুর্নীতি করেই যদি কেউ ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশের অন্য সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার আওয়াজ কিভাবে পাওয়া যাবে? তার লক্ষ্য হবে দুর্নীতি থামানো নয়, বরং দুর্নীতির প্রসার। ক্ষমতায় বসা প্রতিটি মানুষ হোক নীতিমান, শিক্ষিত, মার্জিত ও দেশপ্রেমিক। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশ উন্নতি করুক সব সেক্টরে। বিশ্বের দরবারে সুউচ্চ হোক আমাদের জাতীয় পতাকা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

(দৈনিক কালের কণ্ঠের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।