ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

জীবন বাঁচাবে আলো

সাব্বির হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
জীবন বাঁচাবে আলো

জীবন অমূল্য হলেও তা অপূর্ণ অবস্থায় ঝরে যেতে প্রায়ই শুনি আমরা। আমাদের দেশে বহু যেনতেন কিংবা অপ্রত্যাশিত কারণে মানুষ মারা যায়।

এগুলোর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অন্যতম একটি কারণ।

বেপরোয়া গাড়ির গতি, সিটবেল্ট বা হেলমেট ব্যবহার না করা, লেন ও ট্রাফিক আইন মেনে না চলা, অতিরিক্ত যাত্রী বা মালামাল বহন— ইত্যাদি কারণকেই আমরা সড়ক দুর্ঘটনার ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারি।

এখন মনে হতে পারে, সড়ক দুর্ঘটনায় তো পৃথবীর সকল দেশের কম-বেশি মানুষ মারা যায়, কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে উল্লিখিত কারণগুলো তো পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে একই— তাহলে নির্দিষ্ট করে বাংলাদেশকে নিয়ে বলার কী আছে?

এমন অনেক কারণ আছে, যা আমরা সহজেই এড়িয়ে চলতে পারি, কিন্তু তবুও চলি না। অর্থাৎ, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর এমন কিছু কারণ রয়েছে, যা আমরা একটু সচেতন হলেই এড়িয়ে চলতে পারি; অকালে ঝরে পড়ার পরিবর্তে আরও কিছুদিন এই পৃথিবীর আলো-বাতাস উপভোগ করতে পারি।

যদিও অধিকাংশই হকার কিংবা দখলদারের দখলে এবং বাকি অংশ মোটরসাইকেল চালকদের দখল হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, তবুও আমরা বলতেই পারি— অপ্রতুল হলেও আমাদেরও ফুটপাত আছে। অথচ, আমরা এই ফুটপাত দিয়ে না হেঁটে মূল সড়ক দিয়েই হাঁটি। অনেকে আবার রাস্তা দিয়ে এমন অধিকার নিয়ে হাঁটে যে, পেছন থেকে কোনো গাড়ির হর্ন শুনলে এমন বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকায়, যেন মনে হয় রাস্তা দিয়ে পরিবহন নয়, বরং তারই হাঁটার কথা ছিল।

পরিবরহনগুলো সড়কে চলে অযথাই পথচারীদের বিরক্ত করছে। এভাবে চলে আমরা নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলি।  

উন্নত দেশে কেউ এমন অসতর্কভাবে চলে না। এর একটি কারণ সচেতনতা হলেও অন্য একটি কারণ হলো ইনস্যুরেন্স কাভারেজ। রাস্তায় এভাবে অসতর্ক এবং স্বেচ্ছাচারীভাবে চলে আহত কিংবা নিহত হলে ইনস্যুরেন্স কাভারেজ পাওয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে এই ইনস্যুরেন্সের আওতায়ই বা আছে কয় জন?
যাহোক, এবার একটু অন্য প্রেক্ষাপটে আসি। ২০২৪ সালে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮,৫০০ এরও বেশি মানুষ মারা যায়। এর বড় একটি অংশ আবার মোটরসাইকেল বা মোটরচালিত যানের দুর্ঘটনায়। অথচ চাইলেই আমরা এ হার অনেক কমিয়ে আনতে পারি। এই চাওয়াটা শুধু সচেতনতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পরিবহনের আলোও পারে জীবন বাঁচাতে!

স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতে আমরা দিনের বেলায়ও পরিবহনের লাইট জ্বলতে দেখি। এটি এমনি এমনি কিংবা শক্তি অপচয় ভেবে মোটেই ভুল করবেন না। পরিবহনের সামনের লাইট যখন জ্বলতে থাকে, তখন তা অনেক দূর থেকে বোঝা যায়। এক্ষেত্রে অন্য পরিবহন এবং পথচারীরা সতর্ক হয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।

আলোর একটি বৈজ্ঞানিক দিকও রয়েছে। আলো দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় সহজেই। দিনের বেলায় যখন লাইট জ্বালিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা কোনো পরিবহনকে দূর থেকে লক্ষ করা যাবে, তখন অন্যদিকের সকলেও সতর্ক হওয়ার যথেষ্ট সময় পাবে। এতে অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানোর হারও কমবে। মানে শব্দদূষণও অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

বিশ্বের অনেক নামীদামি পোর্টালে প্রকাশিত অনেক গবেষণাপত্রই দিনের বেলায় জ্বলা পরিবহনের লাইটের উপকারিতার বিষয় তুলে ধরেছে। আমাদের দেশে কি এটি বাধ্যতামূলক করা যায় না? আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা, আঁকাবাঁকা ও ভাঙাচোরা রাস্তা এবং অপ্রয়োজনীয় আইল্যান্ড থাকা সত্ত্বেও পরিবহনের এই আলো অন্তত একটি জীবনকে অকালে ঝরে পড়া থেকে বাঁচাতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

দেশের ছোট-বড়-মাঝারি আকারের পরিবহন এবং মোটরযানের জন্য যদি এটি বাধ্যতামূলক করা যায়, তাহলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবেই। আবার, যেহেতু নিয়ম-কানুন মানতে আমাদের অনেক অনীহা, তাই পরিবহনে যদি এই সিস্টেমটি এমনভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়, যেন গাড়ি স্টার্ট দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আলো জ্বলতে থাকে, তাহলেও সুফল মিলবে বলে আশা করাই যায়।

পরীক্ষামূলকভাবেও এটি চালু করে দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহের রাস্তাকে নির্বাচন করা যেতে পারে, যেখানে দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার বলে আখ্যায়িত করলেও খুব একটা অত্যুক্তি হবে না। সচেতন হওয়ার পাশাপাশি এই কাজটিও করা গেলে পরিবর্তন আসবেই। আমরা যদি সবাই আমাদের আশেপাশের মানুষকে সচেতন করতে পারি, তাহলে একটা সময় দেশের বড় একটা সচেতনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে।  

বেঁচে থাকার জন্য আমরা কতকিছুই না করি। তবে, এবার আলোর ব্যবস্থাই করা যাক। এতে যদি একটি জীবনও বেঁচে যায়, তাহলে ক্ষতি কী?

লেখক: ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড চিফ অপারেটিং অফিসার
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।