ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ পৌষ ১৪৩১, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

বার বার শুধু শিশুরা কেন?

সাজিদ রাজু, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৪
বার বার শুধু শিশুরা কেন? ছবি: ফাহিম

সকাল থেকেই মনটা খুব খারাপ। কোন কাজে মন বসাতে পারছি না।

হয়তো রাতেও দু’চোখের পাতা এক করতে কষ্ট হবে। শুধু মনে পড়ছে হাসপাতালের বেডে কাতরানো ফাহিমের কথা। ছোট্ট শিশু। বয়স আর কত হবে ৭ কি ৮? মাত্র এক-দুইটা কথা বলতে পারে কোন রকম। খেলাই ওর সব। সব কিছুতেই ছিল খেলা। বাবাকে বাবা আর মাকে মা ডেকেও হয়তো খেলার আনন্দ পেতো। অথচ সেই খেলাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। ছোট্ট ককটেলটি যে বল না, তা কি ওর বোঝার কথা?

সাম্প্রতিক দুই জোটের রাজনৈতিক আন্দোলনের বলি হয়েছে ফাহিমের মতো আরো অনেকে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা অনেক। বাড়ির পাশের খেলার আঙিনা থেকে শুরু করে স্কুলে যাবার রাস্তায় কোথাও নিরাপদ নয় ওরা। বাবা-মার সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হলেও রিকশায় পড়ে ককটেল নয়তো পেট্টোল বোমা। আবার যাদের দিয়ে বোমা ছোঁড়া হচ্ছে, তাদের ভেতরও অনেকেই শিশু। শিশুদের ব্যবহার করেই গাড়িতে দেয়া হচ্ছে আগুন। রাজপথে চলাচলকারী গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে দৌঁড়ে পালাচ্ছে এসব শিশু। বেশির ভাগ সময় টাকার লোভ দেখিয়ে বস্তির ছোট ছোট ছেলেদের বেছে নেয়া হচ্ছে এসব অপরাধ সংঘটনে। সেটাও করছে কোন না কোন রাজনৈতিক দল। এমনকি সাম্প্রতিক রাজনীতির এক অন্যতম নাম হেফাজতে ইসলামের মিছিল সমাবেশেও দেখা গেছে শিশুদের নিয়ে আসার ঘটনা। বাদ যায়নি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিভিন্ন আয়োজনে শিশুদের ব্যবহারও।

শিশুদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার নতুন নয়। এর আগেও বহুবার বিভিন্ন এলাকার মন্ত্রী-এমপিদের সম্বর্ধনায় কোমলমতি শিশুদের কড়া রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এসব নিয়ে পত্রপত্রিকায় সমালোচনার ঝড়ও বয়ে গেছে। কিন্তু, অবস্থার খুব বেশি একটা উন্নতি হয়নি।

সবশেষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও দেখা গেল শিশুদের ব্যবহারের শতশত নজির। নির্বাচনে ভোটার বাড়াতে শিশুদেরই লাইনে দাঁড় করিয়ে দিলো বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা। তাদের দিয়ে ভোটও দেয়ার ঘটনা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমগুলো। আবার সেই নির্বাচন ঠেকাতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট যে কৌশল বেছে নিলো, তারও প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে সেই কোমলমতি শিশুরাই। নির্বাচনের আগের দিন দেশের শতাধিক ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা। আর এসব ভোট কেন্দ্রের বেশিরভাগই ছিল সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ। নতুন বছরের শুরুতে যখন শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে নিয়ে নতুন ক্লাসে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর, শিশুদের সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল আবারো সেই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই।

শিশুদের গড়ে তোলার ওপর নির্ভর করে একটি জাতির সামনে এগিয়ে চলা, একটি জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতার পথচলা। কোন একটি দেশ-জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাবে নাকি নিক্ষিপ্ত হবে হতাশার গহীন অন্ধকারে, তা নির্ভর করে শিশুদের বেড়ে ওঠার ওপর। উন্নত দেশগুলো যে কোন নাশকতা, সহিংসতার ঘটনা শিশুদের দৃষ্টির বাইরে রাখে। যে কোন নাশকতাও যাতে শিশুদের স্পর্শ না করে, তার ব্যাপারে সজাগ থাকার দৃশ্য আমরা তাদের সিনেমাতেও দেখতে পাই। ওদের সমাজের যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিবেচনা করা হয়, তা শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় হবে কিনা। আমাদের মতো এমন নগ্নভাগে শিশুদের দিয়ে এমন নোংরা কাজ কখনো করায় না।

আমাদের হয়তো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, অভাব-অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক হীন কর্ম থেকে শিশুদেরকে কি মুক্তি দিতে পারি না? স্বাধীনতার এতো ব্ছর পরেও কি একটু সচেতনও হবো না? আমরা কি কোন দিনই সভ্য হবো না?

সাজিদ রাজু: বার্তাকক্ষ সম্পাদক, সময় টিভি

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।