ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

গণতন্ত্রের লেবাসে অপ-রাজনীতির চর্চা বন্ধ হোক

সেলিম তালুকদার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫
গণতন্ত্রের লেবাসে অপ-রাজনীতির চর্চা বন্ধ হোক

হরতাল-অবেরোধের নামে সহিংস অপরাজনীতির শিকার দেশের সাধারণ মানুষ; যাদের কেউ রাজনীতি করেন না বা এর সুবিধাভোগীও নন। অথচ সেই অপরাজনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে আজ মানুষ দিশেহারা, নেই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিও।



কর্মসূচির নামে হরতাল-অবরোধ আর সহিংস অপরাজনীতির শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও অবরোধ তুলে নিলেন না বিএনপি ও জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া। বরং অবরোধের মধ্যেই ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডেকে বসলেন। উত্তরসূরীদের শিক্ষাজীবন নষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এ কোন ঘৃণ্য খেলায় মেতেছেন তারা?

দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত আমাদের এ ভূ-খণ্ড। বিশ্ব দরবারে গর্বিত ইতিহাসের নাম বাংলাদেশ। আর সেই মাটিতেই রাজনৈতিক নামে দেশজুড়ে চলছে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও চোরাগোপ্তা পেট্রোল বোমা হামলা। এর জন্যই কী একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন শহীদেরা। রাজনীতির নামে মানুষকে জিম্মি করা ও হত্যা করাই যেন সময়ের ‘হাল ফ্যাশান’। শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের জেদের বলি হবে আর কতো সাধারণ মানুষ?

একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পাকসেনাদের পরাজিত করেছিলো এদেশের মুক্তিপাগল বীর বাঙালি। সেই দেশই আজ যেন ভুগছে যোগ্য নেতৃত্ব-সংকটে। জনগণের কথা বলে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদরা পরিণত হয়েছে গণতন্ত্রের ব্যবসায়ীতেÑ যা খুবই ভয়াবহ।  

এ-দেশের রাজনীতিতে হরতাল ও অবরোধ নতুন কোন নাম নয়; তবে এসব কর্মসূচির নামে এখন পেট্রোল বোমা মেরে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও নাশকতার বিস্তার ঘটেছে অনেক। প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিএনপি জোটের সাম্প্রতিক সহিংসতায় এ যাবৎ নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে এ-অবস্থা থেকে দেশের সাধারণ মানুষ মুক্তি পাবে কি না।

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেলেন, দেশে তার মরদেহ আসবে, জানাজা হবেÑ তারপরও দেশে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল দেওয়া হলো। মানে পুরা প্রক্রিয়াটাই চলছে তার জেদের ওপর।

অপরদিকে সরকারেরও জেদ তাদেরকে মাফ চাওয়ানো, নতি স্বীকারে বাধ্য করা ইত্যাদি একগুয়েঁমিতে ভর ক’রে। এর কোনোটাই কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে নয়। কারণ, আমজনতাকে নিয়ে ভাববার সময় তাদের কারোরই নেই।

পুত্রশোকে কাতর বেগম খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে গত ২৪ জানুয়ারি রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিএনপি নেত্রীর গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার আকস্মিক সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছিলো দেশের মানুষ। কিন্তু সেদিন সবার আশায় গুড়েবালি দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা খালেদা  জিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে, দুয়ারে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে দিয়ে গোটা জাতিকে আবার  ডুবিয়েছেন  হতাশার অন্ধকারে। এতকিছুর পরও আবার আমরা শুনছি বিএনপি নাকি সংকট সমাধানের জন্য তাকিয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী পানে। এ কী ধরনের তামাশার রাজনীতি করছেন বিএনপির শীর্ষ রাজনীতিকরা?

সেদিন বিএনপির গুলশান অফিসে দায়িত্বরত লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথকে যেন আরও রুদ্ধ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে এমন ঘটনার পর সরকারের সাথে সংলাপ আশা করা বিএনপির তরফে এক  রসিকতা মাত্র। এ ব্যাপারে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কী তথ্য ছিলো--স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভেতরে যেতে দেওয়া হলো না- কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে তা সবাই জানতে চায়। এ ঘটনার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে কারণ দর্শাতে হবে।

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেলেন। দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই দেশে তার মরদেহ এলো, জানাজা হলোÑ অশ্র“সিক্ত নয়নে সন্তানকে বিদায় দিলেন খালেদা জিয়া। আর চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আর্তনাদ করছে আহতরা...প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এরপরও বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হলো অবরোধ-আন্দোলন চলবেই...। সন্তানহারা মায়ের কষ্ট ও বুকফাটা আকুতিও স্পর্শ করছে না খালেদা জিয়াকে।

এতোকিছুর পরও আমরা আশা করি, গত ২৪ জানুয়ারি রাতের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও আকস্মিক কোনো উদ্যোগ হয়তো নেবেন সংকট সমাধানে। কারণ প্রধানমন্ত্রী দেশের অভিভাবক; জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তার ওপর।

সাধারণ মানুষের জীবন ও দেশের আগামী দিনের উত্তরাধিকার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারোর নেই। দেশ ও মানুষকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ঘৃণ্য এ-খেলার শেষ তাহলে কোথায়? আর কত মায়ের বুক খালি হলে বন্ধ হবে রাজনৈতিক সহিংসতা?

সেলিম তালুকদার: ব্যবসায়ী

বাংলাদেশ সময় ১৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।