ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দেহের কোষ যেন ‘পেট্রোল বোমা’

রউফুল আলম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৫
দেহের কোষ যেন ‘পেট্রোল বোমা’

কী! শিরোনাম দেখে ভ্রু-কুঁচচ্ছাছেন? আসলে এমন করার কিছু  নেই। পেট্রোল বোমা দগ্ধ করছে আমাদের শরীর ও মন।



চারিদিকে মানুষের চামড়া পোড়া গন্ধ! এমন সময়ে কৌতুক করতে আসিনি। মন খারাপের গল্পই বা আর কত লিখবো। তাই ভাবলাম, পেট্রোল বোমার রসায়ন নিয়ে গল্প করি।

আমরা যাকে পেট্রোল বলি, তার আরও কতগুলো নাম আছে। জনপ্রিয় নাম হলো গ্যাসোলিন।

রেগে গেলে অনেকে বলে, কীরে তুই এমন পেট্রোলের মতো জ্বলে উঠলি কেন?

রান্নার কড়াইয়ের তেলও জ্বলে উঠে, জ্বলে হারিকেনের কেরোসিনও। এই গ্যাসোলিন, রান্নার তেল, কেরোসিন এগুলো সব একই গোত্রের। চরিত্রটাও একই।

সবাই শুধু জ্বলে আর জ্বালায়! এর চেয়ে ভালো ওরা কিছুই পারে না, সৃষ্টিই ওদের জ্বলার জন্য।

হয়তো এ জন্যই ট্রাকের তলদেশে, ‘ডিজেল’ বক্সে লেখা থাকে-‘জন্ম থেকে জ্বলছি’।

রসায়নবিদরা এগুলোর একটি সাধারণ নাম দিয়েছেন-এটা হলো হাইড্রোকার্বন। কার্বনের চরিত্র খুবই অদ্ভ‍ূত।
সে একা জ্বলে উঠতে পারে না!

যদি জ্বলে উঠতে পারতো তাহলে মূল্যবান ‘হীরা’ থাকতো না। কেননা হীরা শুধুই কার্বন।

বিষয়টা হলো, এসব হাইড্রোকার্বন অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলেই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে আর জ্বালায়।

এটি আবার নিজেকে পুড়িয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায় না। কিছু রেখেও যায়। সেই কিছুটা হলো কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি।

হঠাৎ এক বুদ্ধিমান প্রশ্ন করে ওঠে-যেখানে অক্সিজেন নেই, সেখানে এটা জ্বলবে কী করে? উত্তরে বলেছি, না।

বর্তমানে পেট্রোল বেশ আলোচিত হচ্ছে দেশে—যা দিয়ে বোমা বানিয়ে পোড়ানো হচ্ছে মানুষকে, সেই সঙ্গে ঝলসে যাচ্ছে তাদের স্বপ্নকেও।

তবে নিজেকে পুড়িয়ে এগুলো যা করে, তা আমাদের দেহের কোষে প্রতিনিয়তই হচ্ছে! বলতে গেলে কোষগুলো যেন জ্বলছে জন্মের পর থেকেই।

আবার ফিরে আসি-হাইড্রোকার্বনে! আমরা যে খাবার খাই, তারও বেশির ‍ভাগই হাইড্রোকার্বন। এরা পেট্রোলের ভাই-বেরাদার, তবে পেট্রোল না। কিন্তু এরা আমাদের কোষে গিয়ে একই কাজ করে।

আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকি, সেই অক্সিজেনের সঙ্গেও জ্বলে ওঠে এটা। আর এর ফল হলো,প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড আর তাপশক্তির উৎপাদন।

তাপশক্তি উৎপ‍াদন হয় বলেই তো আমাদের শরীরের সব ক্রিয়া ঠিক থাকে।

যাই হোক, যারা পেট্রোল বোমা মেরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে তারা যদি এর রসায়ন জানতো-বুঝতো তাহলে কুদরত -ই-খোদা রোডের বিজ্ঞানাগারে কাজ করতো।

বোমা মেরে নিরীহ ‘আমজনতা’কে মারার সুযোগ কিংবা সময় পেতো না।

জাতি হিসেবে এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এই অমানুষ গুলোকে মানুষ করতে পারিনি।

লেখক: ডক্টরাল রিসার্চার, স্টকহোম ইউনিভার্সিটি, সুইডেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।