ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

মুক্তমত

মানুষ, মুরগি, হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ!

আমিনুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫
মানুষ, মুরগি, হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ! ছবি : সংগৃহীত

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে রীতিমতো প্রকাশ্যে! এমন জায়গায় তাকে হত্যা করা হয়েছে যেখানে সব সময় মানুষজন যাতায়াত করে এবং পুলিশি পাহারাও সেখানে রয়েছে। এছাড়া একটি থানাও খুব একটা দূরে ছিল না।

এতো কিছুর পরেও তাকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছে।

হ্যাঁ, মানব হত্যা! এ হত্যাকাণ্ডের পর একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে।

সুইডেনের বিখ্যাত একটি ইংরেজি খবরের কাগজের প্রায় বছর পাঁচেক আগের শিরোনাম ছিলো অনেকটা এ রকম- ‘একটি মুরগি খামারের খুব কাছ দিয়ে সুইডিশ বিমান বাহিনীর কিছু বিমান উড়ে যাওয়ার জন্য বিমানবাহিনীর ক্ষমা এবং ক্ষতিপূরণ!’

ঘটনার বিবরণ অনেকটা এ রকম- ‘এক মুরগি খামারির খামারের খুব কাছে, নিচ দিয়ে সুইডিশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণরত বিমান উড়ে যাওয়ার ফলে যে বিকট শব্দ হয় তাতে করে ওই খামারির ছোট ছোট বেশ কিছু মুরগির বাচ্চা ভয় পেয়ে যায়। আর এতে করে তাদের মাঝ থেকে কিছু বাচ্চা অন্য রকম আচরণ শুরু করতে থাকে, যাকে কিনা ডাক্তার পরবর্তীতে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে ঘোষণা করেন। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই খামারি বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা ঠুঁকে দেন। আর এর ফলশ্রুতিতেই বিমানবাহিনী ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় ও ওই খামারিকে সকল ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়’।

মজার বিষয় হচ্ছে, এ ঘটনাটি খবরের কাগজগুলোতে খুব বড় আকারে প্রকাশিত হয়।

আর বাংলাদেশে বইমেলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মতো একটি জায়গায় একজন লেখককে অনেকটা প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো। এবং এ হত্যাকাণ্ডের পর তিনদিন পার হয়ে গেল। অথচ কোথাও শুনলাম না, দায়িত্বে অবহেলার জন্য সেখানে কর্মরত পুলিশ কিংবা নিরাপত্তারক্ষীদের কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

দায়িত্বে অবহেলার কথা এজন্য বলা হচ্ছে যে, একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে অন্তত মিনিট পাঁচেক সময় লাগবেই লাগবে এবং এ হত্যাকাণ্ড নীরবে সংঘটিত হয়নি। অভিজিতের স্ত্রী সেখানেই ছিলেন এবং তিনি চিৎকার করছিলেন সাহায্যের জন্য। তিনি নিজেও গুরুতর আহত হয়েছেন। তো, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে জঙ্গি সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলো, কিন্তু কোনো পুলিশ তাৎক্ষনিক সেখানে ছুটে ফিরেছে এমনটি তো শোনা যায়নি।

এর মানে দাঁড়াচ্ছে, সেখানকার কর্মরত পুলিশ তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। অবাক করা বিষয় হচ্ছে এজন্য যে, তাদের কোনো শাস্তিও হচ্ছে না। আপনি যদি দায়িত্বে অবহেলার জন্য কাউকে শাস্তি না দেন, তাহলে এ ধরনের অবহেলা ঘটতেই থাকবে। আর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডও বাড়তে থাকবে।

সুইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার হয়তো মেলানো ঠিক হবে না। কারণ, মানব উন্নয়ন সূচকের দিক দিয়ে প্রথম সারির দেশ সুইডেনের একটি অতি ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রীয় সংস্থা একজন ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইবে ও ক্ষতিপূরণ দেবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যে বিষয়টি পীড়াদায়ক তা হচ্ছে, শুধুমাত্র কিছু মুরগির বাচ্চার ভয় পাওয়া ও তার প্রেক্ষিতে তাদের কিছুটা মানসিক সমস্যার কারণে এতো বড় একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা ক্ষমা চাইলো। আর বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায় এবং যেখানে আশেপাশেই পুলিশি পাহারা থাকে সেখানে একজন লেখক, ব্লগারকে এবং তার চেয়েও বড় কথা একজন মানুষকে হত্যা করা হলো। কিন্তু পুলিশ হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা বা কোনো সন্ত্রাসী, জঙ্গিকে শনাক্ত করা তো দূরে থাক, দায়িত্বের এ অবহেলার জন্য এখনো পর্যন্ত তাদের কেউ কোনো শাস্তিরও সম্মুখীন হয়নি।

তাহলে কি এই দেশে মানুষের মূল্য, পশু-পাখির চেয়েও কম!

আমিনুল ইসলাম, কলামিস্ট ও গবেষক

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।