ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মেডিকেল ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর কাহিনী ও প্রতিবাদ

মো. মোহিন উদ্দিন মিজান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
মেডিকেল ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর কাহিনী ও প্রতিবাদ ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন বলে একটি মেয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। এ জন্য তিনি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করেন।

শুধু একবার নয়, পর পর দুইবার তিনি মরণপণ করে পাবলিক মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন।  

যে করেই হোক মেধা তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মেয়েটি দুটি মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হন। এর পাশাপাশি ঠিকঠাক গাইড করার জন্য দু’জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করেন। মেয়েটি এতই মরিয়া ছিলেন যে, যে করেই হোক মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় তাকে থাকতেই হবে।

মেয়েটি মেডিকেল কোচিংয়ের মডেল টেস্টে দশের একজন হন। আর এই সাফল্যকে তার পরিবারের লোকজন ইতিবাচকভাবেই নেন। তারা ধারণা করেন যে, তাদের মেয়ে এবার কোনো পাবলিক মেডিকেল কলেজে অবশ্যই ভর্তি হতে পারবে।

শুধু মেয়েটির অভিভাবকই নয়, তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেও নতুন করে আশা জাগে। মেয়েটিও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন যে, তিনি এবার নিশ্চয়ই কোনো না কোনো একটি মেডিকেল কলেজে চান্স পাবেনই।

যথারীতি তিনি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন এবং তার মাকে জানান, এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ’র ১০০ নম্বর হিসাবে নিয়ে তিনি ১৭০ নম্বর অবশ্যই পাবেন। এ কথার পর মা মেয়ের ওপর ভীষণ খুশি হন।

এরপর ভর্তিপরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। মেয়েটি দেখতে পায়, মেধা তালিকায় তার প্রাপ্ত নম্বর ১৭৫। অথচ তিনি আশা করেছিলেন, তিনি ১৭০ পাবেন। ফলাফল দেখে আনন্দে তার বুক ভরে যায়। খুশির ঢেউ খেলে যায় তার হাসিতে।

কিন্তু একি! পরে দেখা গেল তার মেধা তালিকায় তার স্থান ৭৭৭৭। তারমানে তিনি আর কখনোই পাবলিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না। হতাশায় বুকটা যেন ভেঙে যাচ্ছিল মেয়েটির। কী করবেন, কোথায় যাবেন মাথায় যেন কিছুই ঢুকছিল না তার।

ক্ষোভ-অপমানে চিৎকার শুরু করেন মেয়েটি। চিৎকার করতে করতে তিনি একটি কাচের গ্লাস ভেঙে ফেলেন। তার অবস্থা দেখে পরিবারের সদস্যরা হতভম্ব হয়ে যান। তারাও কিছু ভাবতে পারছিলেন না, কী দিয়ে কী হয়ে গেল!

হঠাৎ করে মেয়েটির ফোন বেজে উঠলো। বার বার রিং হওয়ার পর ফোন ধরার পর ওপাশ থেকে এক বন্ধু জানালেন, তাদের একজন ডিএমসি (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) ও আরেক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (সিএমসি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। সে সঙ্গে অন্য বন্ধুরাও অন্যান্য পাবলিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

তাদের কথা শুনে মেয়েটির যেন বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। তিনি ভাবতে লাগলেন, মডেল টেস্টে এদের ফলাফল ভালো না। এ ছাড়া তারা ভেবে রেখেছিল যে, মেডিকেলে না হলে ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। আর কী করে তাদের মেধাস্কোর এত বেশি হলো!

পরে বিষয়টি তার কাছে পরিস্কার হলো। বুঝতে পেরেই মেয়েটি প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে এলেন। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদে স্লোগান দিতে শুরু করলেন। তার মতো অনেকেই তখন রাজপথে। তারা স্লোগান দিতে থাকলেন- আবার মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এই ফলাফল মানি না।
তার মতো হাজার হাজার ছেলে ও মেয়ে ভর্তিপরীক্ষার ফলাফলে দুর্নীতির তথ্য ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে ছড়িয়ে দিতে শুরু করলেন। জানা গেল, ভর্তিপরীক্ষার ফলাফলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।

এখন মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষার ফলাফল দুর্নীতির প্রতিবাদে রাজপথ দখল করে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী গর্জে উঠেছেন। সঙ্গে আছেন তাদের অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও। সবার দাবি, দুর্নীতির ফলাফল মানি না, মানি না।

তারা ফুঁসে উঠেছেন, রাতের আঁধারে প্রশ্নপত্র ফাঁসের, অর্থের বিনিময়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বদলে দেওয়ার বিরুদ্ধে। তারা দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন।

সেই সঙ্গে ইউনূস আলী আকন্দ নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা; যিনি রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) উচ্চ আদালতে রিট দাখিল করেছেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দুর্নীতির তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন।

তার সেই রিটই এখন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আইনি লড়াইয়ের হাতিয়ার। জয় তারা ছিনিয়ে আনবেনই। সেই আশায় এখনো রাজপথে আছেন তারা

মো. মোহিন উদ্দিন মিজান
ইংরেজি ভাষাতত্ত্ব ও সাহিত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এবি






    

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।