ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

চট্টগ্রাম ভার্সিটির উজ্জ্বল রত্ন মেয়র আনিসুল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৭
চট্টগ্রাম ভার্সিটির উজ্জ্বল রত্ন মেয়র আনিসুল জনপ্রিয় মেয়র আনিসুল হক এখন স্মৃতির আকাশে (ফাইল ফটো)

সদ্যপ্রয়াত জনপ্রিয় মেয়র আনিসুল হক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল রত্ন। পড়েছেন অর্থনীতি বিভাগে। পিতার কর্মসূত্রে বসবাস করতেন চট্টগ্রাম মহানগরীর কেন্দ্রস্থল কাজীর দেউরি-আসকার দিঘি এলাকায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অনেক কীর্তিমানের প্রিয় ক্যাম্পাস। আনিসুল হক তাদের অন্যতম।

ক্যাম্পাস আর চট্টগ্রাম শহরের অনাবিল প্রকৃতিতে মিশে রয়েছে তার অনেক স্মৃতি। তার মৃত্যুতে স্মৃতিরা মায়াবী পর্দার মতো দোলা দিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস ও মহানগরীর প্রকৃতি আর পরিবেশে।

তার সম্পর্কে লেখক, গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হায়াত হোসেন স্মৃতিচারণে বলেন, ‘বোধকরি ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকের কথা। আগ্রাবাদ হোটেলে রোটারি ক্লাবের এক সভায় প্রধান বক্তা ছিলাম। নীতিগতভাবে রোটারি ও লায়ন থেকে দূরে থাকলেও রোটারি নেতা ও ডেইলি অবজারভারের চট্টগ্রাম ব্যুরোর প্রধান, বন্ধু ও ছোটভাই সৈয়দ মুর্তাজা আলীর অনুরোধে রাজি হয়েছিলাম। কারণ ক’দিন আগে সে আমাদের একটি জরুরি খবর ছাপিয়েছিল। হলঘর ভর্তি লোক ছিল, অধিকাংশই ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট জগতের মানুষ। ’

অধ্যাপক হায়াত হোসেন বলেন, ‘অনুষ্ঠানে আমার বক্তব্যের বিষয়বস্তু ছিল মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিত।  কারণ ওপেক কর্তৃক ঘোষিত অয়েল এম্বারগো বা পাশ্চাত্য দেশগুলোতে তেল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট সংকট।  সে আমলের একটি স্পর্শকাতর বিষয়, সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। আমি লক্ষ্য করলাম বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার এক তরুণ যুবক এককোণায় বসে কিছু নোট নিচ্ছিল। তবে কানাডা-নিবাসী এক  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকায় বক্তৃতা শেষে আলোচনা জমে ওঠে। চা-পর্বে ওই যুবক এসে পাশে দাঁড়ালো এবং বললো, “স্যার আমি আপনাদের ছাত্র ছিলাম, তবে অর্থনীতি বিভাগের। সেজন্যই বোধ করি বক্তৃতাটা খুব ভাল লেগেছে এবং কিছু নোট নিয়েছি”। ’

অধ্যাপক হায়াত হোসেনকে সেই ছাত্র তার নাম ঠিকানাও বলেছিলেন। সেই স্মৃতি হাতড়ে অধ্যাপক হায়াত বলেন, ‘সেসব কিন্ত স্বাভাবিকভাবেই ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর বারবার টিভিতে উপস্থাপক বা সঞ্চালক হিসেবে দেখতে দেখতে নামটা মুখস্থ হয়ে গেছে। যতটুক মনে পড়ে, তারা স্টেডিয়ামের পশ্চিম দিকে অথবা আসকার দিঘির পশ্চিম পাড়ে থাকতো এবং ওর বাবা ছিল ফায়ার সার্ভিসের অফিসার। ’

কয়েক বছর আগে ইকোনমিকসের আরেক পুরনো ছাত্র আ. মান্নানের সঙ্গে অধ্যাপক হায়াত হোসেনের  দেখা চবি ক্যাম্পাসে। জিজ্ঞেস করেন, ‘এখানে কী কাজে এসেছো?’ সে বললো, “পুরনো প্রতিবেশী ও বন্ধু আনিসের এমএ সার্টফিকেট তুলতে এসেছি, ও ঢাকায় মেয়র পদের জন্য দাঁড়াচ্ছে। ” অবাক হইনি কারণ অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও নেতারাই এ কাজটি শেষ মুহূর্তে করে একান্ত প্রয়োজন হলে এবং তাদের সার্টফিকেটগুলো সাধারণতঃ খুব গৌরবজনক নয়। ’

‘যাইহোক, একসময় আনিসকে দেখলাম শোবিজ বা বিনোদনের জগৎ থেকে ব্যবসার জগতে ঢুকে পড়তে এবং অচিরেই গার্মেন্ট সেক্টরের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হতে,’ বলেন হায়াত হোসেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই তার মৃত্যুতে শোকাহত। সবাই স্বীকার করেন যে, ঢাকার মেয়রের দায়িত্বেও তার উজ্জ্বলতা ও জনপ্রিয়তা অল্প সময়ে ছড়িয়ে পড়ে।  দেশের অন্যান্য মেয়রদের মতো তার কাজকর্মে তেমন কোনো দলীয় মনোভাব দেখা যায়নি। তিনি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। আসলে নিজের সাহস ও মনোবল না থাকলে কেউ তা পারে না, এমনটিই প্রমাণ করেছেন আনিসুল হক।

লেখক
ড. মাহফুজ পারভেজ
প্রফেসর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭
এমপি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।