ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বিজয়ের এই দিনে ব্রিটেন প্রবাসীদের চাওয়া-পাওয়া

ফারুক যোশী, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১১
বিজয়ের এই দিনে ব্রিটেন প্রবাসীদের চাওয়া-পাওয়া

১৬ ডিসেম্বর--- চল্লিশ বছর আগের ঐ দিনটাতে সুখে বিহবল ছিলো বাঙালী। জয় বাংলা আর বিজয়ের উচ্ছাসে লাখো-কোটি জনতা রাস্তায় নেমেছিলো সেদিন ১৬ ই ডিসেম্বরে।

লাখো শহীদের আত্মদান আর হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর মধ্যি দিয়ে তৎকালীন পাকসেনা রাজাকার আলবদররা জ্বালিয়ে দিয়েছিলো মানুষের বাড়ি-ঘর একাত্তুরের রক্তঝরা দিনগুলোতে । উজাড় করে দিয়েছিলো বসতি। আর এরই মধ্যি দিয়ে বাংলার বীর মুক্তিসেনারা ঝাপিয়ে পড়েছিলো বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, বনে-বাদাড়ে কিংবা ডাঙ্গায়। এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছিলো সেসময়। দেশ মাতৃকার জন্যে । বিজয়ের জন্যে । স্বাধীনতার জন্যে।   রক্ত-লাশ আর সম্ভ্রমহানীর আর্তনাদের মধ্যি দিয়ে অবশেষে এলো স্বপ্নের স্বাধীনতা,বিজয়ের দিন। কিন্তু সে দিনটাতেও ছিলো সুখের পাশাপাশি শোকের হাহাকার। একদিকে আনন্দের বন্যা, অন্যদিকে শত-সহস্র স্বজনহারা মানুষ কাদছিলো প্রিয়জন হারিয়ে। শোক আর সুখেই জাতির বিজয়, আমাদের স্বাধীনতা।

এ বিজয় অর্জনে যেমন বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক-ছাত্রসহ লাখ লাখ মানুষ সরাসরি যুদ্ধে নেমেছিলো, ঠিক তেমনি লাখো-কোটি বাঙালী এ যুদ্ধকে জানিয়েছিলো সর্বাতœক সমর্থন। গ্রামের নববিবাহিতা বউ থেকে শুরু করে শহরের চিকিৎসক-প্রকৌশলিসহ সকল বাঙালিই হাত বাড়িয়েছে-- যোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে কিংবা রাতের অন্ধকারে পথ দেখিয়ে। আর তারই প্রেরনায় লড়েছে আমাদের স্বাধীনতা পাগল সংগ্রামী যোদ্ধারা।

প্রবাস বিশেষত এই ব্রিটেনে অবিশ্বাস্য এক সংগ্রাম করেছে যেন এখানকার বাঙালিরা। লন্ডন থেকে শুরু করে বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, ওল্ডহাম, হাইড, কভেন্ট্রি, ব্রিস্টল,স্কটল্যান্ড কোথায় ছিলো না বাঙালিদের সেই সময়গুলোর তৎপরতা। বাঙালীরা এখানেও বীরদর্পে লড়েছে। ব্রিটেনের ঐতিহাসিক হাইড পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ। করেছে ডাউনিং স্ট্রিটে বিক্ষোভ। ব্রিটেনসহ পৃথিবীর মানুষের সমর্থন আদায়ে এই সমাবেশগুলোর চিত্র জায়গা করে নিয়েছিলো তখন ব্রিটেনের মূল গণমাধ্যমগুলোতে। পাকিস্তানিদের ম্যাসাকারের চিত্র তুলে এক একজন ব্রিটেন প্রবাসি বাঙালি যেন স্বাধীনতার দূত হিসেবে কাজ করেছেন তখন। একাত্তুরের কোন এক সময় পাকিস্তান হাইকমিশনে বিক্ষোভ করতে গিয়ে আহত হয়েছে অনেকে। গ্রেফতারও বরণ করতে হয়েছে এগারো জনকে। গ্রেফতারকৃতদের মাঝে একজন ইব্রাহিম আলীকে ছয় সপ্তাহের জন্য কারাগারেও যেতে হয়। এই প্রবাসে ক্রমেই জন্ম নিতে থাকে পাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃনা।

অবিশ্বাস আর ঘৃনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি আর বাঙালিদের মাঝে বাড়তে থাকে বিদ্বেষ। দাঙ্গা-কলহ হয়ে উঠে নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর এরই নির্মম শিকার হন আব্দুন নুর নামের একজন। বৃহত্তর সিলেটের ঐ আব্দুন নুরই সম্ভবত প্রথম বাঙালি, যিনি স্বাধীনতার নাম নিয়ে প্রবাসে নিহত হন কোন এক পাকিস্তানির হাতে। এই হত্যাকে সাধারন হত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও এটা কি আসলেও তাই। কারণ এটা ছিলো পাকিস্তানি  আর বাঙালি দ্বন্দ্ব এবং এই দ্বন্দ্বেরই নির্মম পরিনতিতে স্বাধীনতার বলি হন আব্দুন নুর। আর এ অর্থে তিনি একাত্তুরের শহীদ।

আবেগী প্রবাসীরা দেশের হয়ে লড়েছে এই ব্রিটেনে। আন্দোলন থেকে শুরু করে কুটনৈতিক তৎপরতা , জেলবরণ থেকে শুরু করে আতœাহুতি ---- এভাবেই ব্রিটেন প্রবাসীরা হাত বাড়িয়েছে সহযোগিতার হাত। তাইতো মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ সমর আর প্রবাসী বাঙালীদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস আমাদের লাল সবুজের বাংলাদেশ।

লাালসবুজের ঐ বাংলাদেশ প্রবাসীদের চাওয়ার হয়ত থাকতে পারে অনেক কিছুই। ব্রিটেন কিংবা পশ্চিমের দেশগুলোতে অভিবাসিত স্বচ্ছল বাঙালীদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্যাগ কিংবা বীরত্বের স্বীকৃতির ব্যাপারটা সরকার ভাববে বলেই আমাদের বিশ্বাস। কারন ইতিমধ্যে সরকার অবাঙালি বিদেশীদের স্বিকৃতী দেবার ঘোষনা দিয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে বিদেশিরা

বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিলেন, তাদের পুরস্কৃত করছে বাংলাদেশ সরকার। আমরা বিশ্বাস করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এই সরকার লন্ডনসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে সেই সব বাঙালিদের সন্ধান করবে, যার জীবন উৎসর্গের কিংবা জেলবরণের মধ্য দিয়ে কিংবা যাদের শ্রমে-ঘামে এবং যাদের নেতৃত্বে এমনকি সাধারন প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধে এই অর্থ সহায়তার মধ্যি দিয়ে বাংলাদেশের বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারে আমাদের সরকার। ব্রিটেনের অসংখ্য সভায়-সমাবেশে উচ্চারিত দাবিও এটা।

একটা ব্যাপার এখানে বলে রাখা ভালো, ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাটদের পাশাপাশি লন্ডন ম্যানচেস্টারে সরকারের তথা আওয়ামীলীগের নিজস্ব কিছু লোককেও বসানো হয়েছে। এই পার্টি মনোনীত লোকদের দিয়েও চাইলে সরকার এ কাজটি করে নিতে পারেন আগামী এক বছরের মধ্যেই।

যদিও এ উদ্যোগ এখনও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি বলেই জানিয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত বাংলাদেশ দূতাবাস লন্ডন ও ম্যানচেস্টারের দু‘জন গুরুত্বপূর্ন কর্মকর্তা। তবুও আমরা বিশ্বাস রাখি বাংলাদেশের লন্ডন-বার্মিংহাম-ম্যানচেষ্টার

হাইকমিশন একাজগুলো করতে পারবে । পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলোতেও এটা শুরু করা যেতে পারে।

তবে একটা কথা এখানে বলে রাখা ভালো, আসল মানুষগুলোরই যেন সন্ধান করে হাইকমিশন। কেননা এখানেও দেশের মতো অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন সভায়-সমাবেশে।

ফারুক যোশী : যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও কলাম লেখক
faruk.joshi@gmail.com

বাংলাদেশ সময় ১০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।