ময়মনসিংহ: নিরপেক্ষ নির্বাচনে দেশের জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দিনের ভোট আগের রাতে দিয়েছিল।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় সড়কে সারাদেশে বিরোধীমতের নেতাকর্মীদের হত্যা, মিথ্যা গায়েবি মামলায় গ্রেফতার ও পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, জনগণের দাবি নিয়ে বিএনপি মাঠে নেমেছে। এতে সরকার ভীত হয়ে সারাদেশে গায়েবি মামলায় গ্রেফতার শুরু করেছে। নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করেছে। ময়মনসিংহ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফয়সাল, সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নেত্রকোনায় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সমাবেশে পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনারা গায়ের জোরে সরকারের অবৈধ নির্দেশনা অনুসারে এদেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে ভয় ভীতি সৃষ্টি করবেন না। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। শপথ নিয়েছেন জনগনের সেবক হিসেবে কাজ করবেন। এখনো সময় আছে এই অবৈধ সরকারের নির্দেশনা না মেনে জনগণকে অনুসরণ করুন। জনগণ বার্তা দিয়েছে তারা এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর অবৈধ সরকারকে বিদায় করতে কর্মসূচি আসছে। ওই কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হবে। এই স্বৈরাচার সরকার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলন চলমান থাকবে।
ময়মনসিংহসহ সারাদেশে বাস ধর্মঘট দিয়ে, সন্ত্রাসী হামলা করে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঠেকাতে পারেননি উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ওই হামলায় সাবেক এমপি শাজাহান খান সরকারের পেটুয়া বাহিনীর হামলায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এনিয়ে আরও ৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। খালেদা জিয়া দেশের মানুষের রাজনীতি করেন, তারেক রহমান দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। তাই এই সরকার মিথ্যা মামলায় তাদের মুখ বন্ধ করতে সাজা দিয়েছে। সেই সঙ্গে সারাদেশে এক লাখ মামলায় বিএনপির ৩৭ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এই নজির নেই। এই অবৈধ সরকার সব করছে গায়ের জোরে।
কিন্তু দেশের জনগণ চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, তারা বার্তা দিয়ে দিয়েছে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতির সুযোগ করে দিতে হবে। এই জন্য এই স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় করতে হবে। কারণ কোনো স্বৈরাচার আপনা আপনি বিদায় হয় না। তাই এই সরকারকে টেনে-হিঁছড়ে বিদায় করতে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে। কোনো ইভিএম নয়, নিজের হাতে নিজের ভোট দিতে হবে। শেখ হাসিনার সময় শেষ, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ তারেক রহমানের বাংলাদেশ।
এই সরকার আপোষে যাবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই। র্যাব-পুলিশের বড় বড় কর্তাদের ওপর আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। এই সরকারের কথায় যদি আর কোনো অফিসার নির্যাতন করে, তাহলে আমরা আর বসে থাকতে পারব না।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার ব্যাংক লুটপাট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে পারছে না। অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছে দেশে দুর্ভিক্ষ আসছে। কিন্তু যারা এটা সৃষ্টি করেছে তারা দুর্ভিক্ষ তাড়াতে পারবে না। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণঅভ্যুত্থান করে এই সরকারকে টেনে হিঁছড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দিশেহারা।
তিনি বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে তারা সারাদেশে মিথ্যা গায়েবি মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে ভীতির সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু এসব করে কোনো লাভ হবে না। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। অচিরেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করা হবে।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী রানা, শাহ শিব্বির আহম্মেদ ভুলু, অ্যাড. এমএ হান্নান খান, লিটন আকন্দ, একেএম মাহাবুবুল আলম, শামীম আজাদ, কায়কোবাদ মামুন প্রমুখ। এ সময় বিএনপি ও অংঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২২
এমএমজেড