ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির ২৭ দফার রূপরেখা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২২
‘রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির ২৭ দফার রূপরেখা

ঢাকা: সংবিধান সংস্কার, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনাসহ রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই রূপরেখা প্রকাশ করা হয়।

১. ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া সব অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ রহিত বা সংশোধন করা হবে।


 
২. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ জন্য একটি ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করা হবে।  

৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।

৪. রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে।

৫. পরপর দুই টার্মের (মেয়াদ) অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

৬. বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘উচ্চ কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে।  

৭. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।  

৮. বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হবে।

৯. সব রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এই সব প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ দেওয়া করা হবে।
 
১০. বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি  ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে।  

১১. একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা হবে।

১২. মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে।  

১৩. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হবে।

১৪. সব স্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইউনিভার্সাল হিউম্যান রাইটস চার্টার অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে।

১৫. বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে।  

১৬. ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন।

১৭. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে।  

১৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করা হবে।

১৯. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না।  

সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে।  

২০. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে।  

২১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে।

২২. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেওয়া হবে।  

২৩. যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হবে।  

২৪. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।  

২৫. চাহিদা-ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

২৬. ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘এনএইচএস’ এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা হবে।

২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে।

রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন অনুগ্রহ করে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত রূপরেখাটি বিবেচনা করবেন। বিএনপির ঘোষিত রূপরেখাটি ভিশন-২০৩০ এর আলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে।  
 
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সঞ্চালনায় রূপরেখা ঘোষণার ব্রিফিংয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদসহ অনেকে অংশ নেন। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সায়ীদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াসহ বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর অনেকে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, দিলারা চৌধুরী ও অধ্যাপক এসএম ফায়েজ প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২২

এসআর/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।