ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

না খেয়ে মরার চেয়ে পুলিশের গুলি খেয়ে মরা সম্মানের: সেলিমা রহমান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
না খেয়ে মরার চেয়ে পুলিশের গুলি খেয়ে মরা সম্মানের: সেলিমা রহমান

সিলেট: না খেয়ে মরার চেয়ে পুলিশের গুলি খেয়ে মরা অনেক সম্মানের। তাই সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।


 
তিনি বলেন, সরকার জনগণের পেটে লাথি মেরে উন্নয়নের গান গাইছে। কিন্তু সরকার জনগণের কোনো উন্নয়ন করেনি। দেশে আজ দুর্ভিক্ষের অবস্থা। বিদ্যুৎ, দ্রব্যমূল্যসহ সবকিছুতে জনগণের নাভিশ্বাস ওঠেছে। তাই জনগণ এই সরকারকে আর চায় না।
 
শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিলেট নগরের রেজিস্টারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী।
 
দাবি আদায়ে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সিলেটসহ সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সেলিমা বলেন, আওয়ামী লীগ ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর কথা বলে এখন ৮০ টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে। মধ্যবিত্তরা নিম্নবিত্ত হয়ে যাচ্ছে আর নিম্নবিত্তরা অতিদরিদ্র সীমার নিচে যাচ্ছে। তারা ক্ষমতায় এসে এ পর্যন্ত ১৫ বার বিদ্যুৎ এর দাম বাড়িয়েছে। একদিকে জনগণ গরিব হচ্ছে আর অন্য দিকে তারা দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। তাই এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
 
সেলিমা রহমান বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোনো মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। কেন্দ্রে কুকুর শুয়েছিল। ওই নির্বাচনকে মানুষ ‘কুত্তা মার্কা’ নির্বাচন বলে আখ্যায়ত করেছে। আর ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতেই দেওয়া হয়ে গেছে। এই সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়নি।
 
তাই জনগণের ভোটে না আসা সরকার জনগণের দাবির কথা না শুনে দুর্নীতি, লুটপাট চালাচ্ছে। দেশবাসী আওয়ামী লীগের ইতিহাস জানে, এই ইতিহাস পরিবর্তন করা যাবে না। তাই দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া যে সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন, সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
 
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতির খেসারত দিচ্ছে জনগণ। বিদ্যুৎসহ সবকিছুর দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে তারা ধ্বংস করেছে। এই সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের ওপর চেপে বসেছে।
 
তিনি বলেন, সরকার ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদ, আনসারসহ শত-শত নেতাকর্মীদের গুম করে রেখেছে। এখন তারা বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া ছাড়া আর তাদের কোনো কাজ নেই। এই সরকারই শেষ সরকার নয়, প্রশাসনের যারা জনগণের সাথে শত্রুতার আচরণ করছে, তাদের কিন্তু দেশেই থাকতে হবে। নির্দেশদাতারা পালিয়ে যাবেন, আপনারা পালাতে পারবেন না। দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হবে।
 
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা এনামুল হক চৌধুরী বলেন, এই রাষ্ট্রকে মেরামত করতে হলে সরকারকে বিদায় করতে হবে। সরকারকে বিদায় করতে না পারলে রাষ্ট্রও মেরামত করা যাবে না। এজন্য গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারসহ বিএনপির ১০ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।
 
বিএনপির চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, সরকার যদি গণতন্ত্রের ভাষা না, বুঝে তাইলে দেশে শ্রীলংকার অবস্থা হবে। দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হলে হায়েনাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
 
যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সুহেল বলেন, আমরা যখন এইখানে সমাবেশ করছি, তখন সিলেটে আরেকটি সমাবেশ হচ্ছে। আমাদের চুলকানি দেওয়ার জন্যই একইদিনে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। ওখানে শান্তি সমাবেশের নামে তারা ‘পিস্তল রাইফেল, বন্দুক’ নিয়ে সমাবেশ করছে।
 
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের দিন মানুষ ঘুম থেকে জেগে দেখে আগের রাতে ভোট দেওয়া শেষ। মৃত মানুষও কবর থেকে উঠে এসে নাকি সেই নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশের সেই নির্বাচন দেখার পর জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন 'আমরা জানতে পেরেছি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালেট ভর্তি হয়ে গেছে, পুলিশ সেই কাজ করেছে। পৃথিবীর কোথাও এমন কাজ হয়নি'। মানুষ কত নির্লজ্জ বেহায়া হলে বলতে পারে তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়।
 
সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকীর পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা সাখাওয়াত হাসান জীবন, কেন্দ্রীয়সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য আবুল কাহের শামীম, মিজানুর রহমান, শাম্মী আখতার প্রমুখ।
 
আজ বিকেলে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির ‘যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা’দাবিতে সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে এসে পৌঁছান।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।