ঢাকা: আগামী ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক চায় ১৪ দল। তবে এ নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র হয়, তার প্রতিরোধ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রী পার্টির নেতা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দেশকে তারা (বিএনপি) অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। চোরাগুপ্তা পথে কিছু হবে না, লড়াই হবে রাজপথে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, কোনো অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করবে। কমিশন স্বাধীনভাবে এই নির্বাচন পরিচালনা করবে।
১৪ দলের অন্যতম নেতা ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, একাত্তরের যুদ্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক সমাধান করেছিল। সংবিধানের চার নীতি; মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এটা মীমাংসা করেছিলেন। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের নাম, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা মীমাংসিত ঘটনা।
পঁচাত্তরের পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরা ছয়টি জঘন্য অপরাধ করেছে। সংবিধান নষ্ট করেছে, একাত্তরের রাজাকারদের ভাগাড় (ডাস্টবিন) থেকে টেনে নিয়েছে। একাত্তরের সামরিক শাসনের ঔরসে জন্মলাভ করা বিএনপি ও একাত্তরের রাজাকার জামায়াত- এ দুই রাজাকারের সরকার গঠনের প্রস্তাব মহাবিপদ ও অশনি সংকেত। তাদের এক চুল ছাড় দেব না।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, সারা বাংলাদেশে ১৪ দলীয় কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেব। ১৪ দলকে সুসংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শক্তিকে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করতে হবে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র মেরামত করতে ১০, ২৭ দফা দিচ্ছে। কে মেরামত করবে? সে তো লন্ডনে। লন্ডন থেকে আবার ষড়যন্ত্র চলছে, সদা সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের বদনাম করার জন্যে দুর্নীতিতে লিপ্ত রয়েছে অনেকে। তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
নয় মাস পরে জাতীয় নির্বাচন। তা নিয়ে বিদেশে বসে যড়যন্ত্র চলছে বলে উল্লেখ করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে স্বাধীন নির্বাচন দেখতে চায়, আমরাও দেখতে চাই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একাত্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে অস্ত্র দিয়ে রক্তের হোলি খেলা করেছে।
বিএনপি কেন নির্বাচনের বিরুদ্ধে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ১৮ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, সরকারে ছিল কে? ফখরুদ্দীনের পরিচয় ছিল কি? জিয়াউর রহমান কর্তৃক নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল কে? জেনারেল মতিন। পরিচয় কি? খালেদা জিয়ার সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান। মঈন উদ্দিন কে? ছয় জনকে বাদ দিয়ে খালেদা জিয়া যাকে সেনাবাহিনী প্রধান করেছিলেন। সেদিন যে লোকগুলোকে নিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছে তারা ছিল বিএনপিপন্থী।
আমাদের সংবিধান নিয়ে যারা কথা বলে তারা জাতীয় শত্রু। সংবিধান নিয়ে কথা বলার জন্য সেই আইনে তাদের কেন গ্রেফতার করা হয় না? যারা দেশের অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলে সেই আইনে কেন তাদের গ্রেফতার করা হয় না? কেন তাদের সেই আইনে শাস্তি দেওয়া হয় না? এটাই আজ আমাদের জিজ্ঞাসা। এ সময় সেই আইন যথাযথ প্রয়োগ করে জনগণের সামনে স্বাধীনতাবিরোধীদের শাস্তির আহ্বান জানান তিনি।
আমু বলেন, আমরা ১৪ দল স্বাধীনতার পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এবং বঙ্গবন্ধু রচিত সংবিধান পক্ষে কাজ করে আসছি। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচলভাবে জাতীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে আমরা এগিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর কে ক্ষমতায় এলো? খন্দকার মোস্তাক। আওয়ামী লীগ নেতা, অর্থাৎ একটা ধারণা দেওয়া হলো আওয়ামী লীগপন্থীরাই ক্ষমতায় আছে। তার আড়াই মাস পর ক্ষমতায় এলো জিয়াউর রহমান। পরিচয় কি? মুক্তিযোদ্ধা। কর্মকাণ্ড কী? কর্মকাণ্ড হচ্ছে অমুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল্যবোধকে হত্যা করে এই দেশে পাকিস্তানী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা। সেই লক্ষ্যে সেদিন ১৫ আগস্ট সংঘটিত করে এদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান আমল থেকে সামরিক সরকার যখন আছে তখন ইমিডিয়েট যে সরকার থাকে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, তাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, তাদের সব কিছু নিয়ে আসে। আমরা গণতন্ত্র দেব– এই কথা বলে তারা আসে। কিন্তু এই সরকার যখন এলো (ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিন সরকার), তারা কিন্তু তখন যে সরকার ছিল (খালেদা জিয়া) তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। প্রথমে গ্রেফতার করা হলো শেখ হাসিনাকে। তিনি ছিলেন বিরোধী দলের নেতা। খালেদা জিয়াকে কিন্তু গ্রেফতার করা হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
এনবি/এমজে