ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

প্রার্থী হয়ে শুধু মারই খেয়েছি: হিরো আলম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
প্রার্থী হয়ে শুধু মারই খেয়েছি: হিরো আলম

ঢাকা: স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনবার মার খাওয়ার কথা উল্লেখ করে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম বলেছেন, প্রার্থীকে পছন্দ না হলে ভোট দিয়েন না। এড়িয়ে যান।

কিন্তু আমাকে মারার অধিকার দেওয়া হয় নাই। এ সময় আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলেও ফের উল্লেখ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেলে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের দিন হামলাকারীদের শনাক্তে ডিবি পুলিশ প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

হিরো আলম বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনবার নির্বাচন করে মার খেয়েছি। প্রথমে ২০১৮ সালে, এরপর বগুড়ায়, সেখানে জিতলেও ফল দেয়নি। আবার ঢাকায় উপনির্বাচন করতে এসে মার খেলাম। আমি চেষ্টা করেছি, সুষ্ঠু ভোট হোক, ভোটাররা ভোট দিতে আসুক। কিন্তু মার খেলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবো না।

ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। সেখানে ভোটের শেষ মুহূর্তে আমার ওপর হামলা হয়। সেখানে হামলায় কারা কারা ছিল তাদের শনাক্তের জন্য আমাকে ডাকা হয়েছিল। আমি ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞ তারা দ্রুত হামলাকারীদের ধরেছে, যা ভাবতেও পারিনি। আমি ভেবেছিলাম হামলাকারীরা ক্ষমতাশালী দলের লোক, তাদের হয়তো ধরবে না। এই নির্বাচনে হামলায় আমি মারাও যেতে পারতাম। নির্বাচন নির্বাচন করে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। যারা ক্ষমতাশালী দলের লোক তারা ঠিকই ক্ষমতা দেখিয়ে ক্ষমতা আদায় করে। নির্বাচন করতে এসে কোনো মায়ের জন্য বুক খালি না হয়। এ সময় হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

হিরো আলম আরও বলেন, আমাকে পছন্দ না হলে আমাকে ভোট দিয়েন না, এড়িয়ে যান। কিন্তু আমাকে মারার অধিকার কাউকে দেওয়া হয় নাই। সেদিন যেভাবে আমাকে মারা হয়েছে- একমাত্র আল্লাহর জন্য আমি বেঁচে আছি। হামলাকারীরা আমাকে পাষণ্ডের মতো মেরেছে, তাদের বিবেকে বাঁধেনি। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও তারা আমাকে মেরেছে।

হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামলাকারীদের গায়ে নৌকার ব্যাচ দেখেছিলাম। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন ছিল, কিছু ভাড়া করা লোক ছিল। কিছু আওয়ামী লীগের ব্যাচ পরা ছিল। প্রকৃত আওয়ামী লীগের কয়জন তা জানি না।

হামলার ঘটনা সাজানো এমনও শোনা গেছে- এ প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, হামলায় যদি আমার লোকই থাকে তবে তো আমার লোকই ধরতো। যাদের ধরে আনা হয়েছে তাদেরকে তো রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে তারা যদি বলে ওরা আমার লোক, তাহলে আমি মাথা পেতে নেব। কারও নির্বাচনের মাঠে একদিকে মার খেতে হচ্ছে, টাকা পয়সা যাচ্ছে। তাদেরকে আবার মামলার শিকারও হতে হচ্ছে। মানুষ যদি এতো কিছুর শিকার হয়, তারা তো নির্বাচনে যাবে না। আমার মনে হয় না, আর কখনো কেউ নির্বাচনে আসতে পারে।

পুলিশ কি সেদিন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল? জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, আমার ওপর যখন হামলা হয় তখন পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে সত্যি-ই ব্যর্থ হয়েছিল। পুলিশ ইচ্ছা করলে তাদের কর্তব্য পালন করতে পারতো। প্রথমে একটা ছেলে আমাকে ঘুষি মারে। আমি কিন্তু দৌড়ে গিয়ে তাকে বলেছি এই ঘুষি মারলি কেন? আমি পুলিশকে বলছি, এই লোকটি আমাকে ঘুষি মেরেছে। পুলিশ কিন্তু তাকে ধরেনি। উল্টো আমাকে ধরে রেখেছিল। পুলিশের উচিত ছিল তাকে ধরা। তাহলে আর কেউ আমার ওপর হাত দিতে পারত না। সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা কেন নীরবতা পালন করেছিল সেটি আমি জানতে চেয়েছি ডিবি প্রধান হারুন সাহেবের কাছে।

১৩ টি অ্যাম্বেসি ও মিশন আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যাতে সফল হয় সেটিকে ত্বরান্বিত করতে তারা আপনাকে সমর্থন জানিয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন? হিরো আলম বলেন, এটাকে আমি সমর্থন করি এবং খুবই ভালোভাবে দেখি। এই যে অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে, মায়ের বুক খালি হচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনার হয়তো চুপচাপ সহ্য করতে পারে। কিন্তু বাইরের দেশ-সময় এক না, একটা লোককে কুত্তার মতো পেটানো হয়েছে, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সবাই তো আর এক না যে নীরবতা পালন করবে। তারা দেখছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই তারা কথাবার্তা বলছে।  

সোমবার (১৭ জুলাই) ঢাকা-১৭’ উপ-নির্বাচনের দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে একদল লোক হিরো আলমকে মারধর করে।   জীবন বাঁচাতে এ সময় হিরো আলমকে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। পরে তিনি রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ১৫/২০ জনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন হিরো আলমের ব্যক্তিগত সহকারী মো. সুজন রহমান শুভ।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, সোমবার সকাল থেকে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরুর পর হিরো আলম বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় হিরো আলম বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে কেন্দ্র পরিদর্শন করতে যান। এরপর প্রায় ৪০ মিনিট কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ৫/৬ জন সহযোগীসহ হিরো আলম বের হয়ে আসার সময় অজ্ঞাত পরিচয়ের ১৫/২০ জন তার গতিরোধ করে বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে হিরো আলমকে আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। মারধরের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের একজন হত্যার উদ্দেশ্যে হিরো আলমের কলার চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। এর মধ্যে আরেকজন এসে হিরো আলমের তলপেটে লাথি মারলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান।

মামলার বাদী হিরো আলমের ব্যক্তিগত সহযোগী সুজন রহমান শুভ এজাহারে আরও অভিযোগ করেন, হিরো আলম রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর বাকি আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে এবং টানাহেঁচড়া করে। এসময় হিরো আলমের ব্যক্তিগত সহকারী রাজীব খন্দকার, রনি ও আল আমিন তাকে বাঁচাতে এলে তাদেরও মারপিট করে জখম করে আসামিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।