ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বাইরে ২০১৫ সালে উচ্চ আদালত প্রাঙ্গনে আলোচনায় ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সরকার দলীয় মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
খালেদার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তিন মামলা সচল হওয়া এবং মায়ার দুর্নীতি মামলার খালাসের রায় বাতিল, আর সেটাকে কেন্দ্র করে তার মন্ত্রিত্ব পদের বৈধতার প্রশ্নে করা রিট নিয়ে এ আলোচনা চলে বিদায়ী বছরজুড়ে।
খালেদা জিয়া
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সেনা সমর্থিত সাবেক জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদার বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি, গ্যাটকো ও নাইকো নিয়ে করা হয় তিনটি দুর্নীতির মামলা। ওই সময়ে খালেদার আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ তিন দুর্নীতি মামলার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন।
বিদায়ী বছরের ১৮ জুন নাইকো, ৫ জুলাই গ্যাটকো ও ১৭ সেপ্টেম্বর বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়ে খালেদাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এ রায়ের মধ্য দিয়ে সাত বছর পর বিচারিক আদালতে সচল হয়েছে মামলা তিনটি।
গত ০১ ডিসেম্বর নাইকো দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল আবেদন করেছেন তিনি।
ঢাকার বিশেষ জজ-৯ আমিনুল ইসলামের আদালতে এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৮ ডিসেম্বর।
২০০৭ সালের ০৯ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলা হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন বলে মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়।
২০০৭ সালের ০২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তেঁজগাও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।
২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া এবং তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে।
মায়া
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপন এবং অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ এনে ২০০৭ সালের ১৩ জুন সেনা সমর্থিত সাবেক জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা করে দুদক।
এ মামলায় ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত দু’টি ধারায় মায়াকে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। বিচারিক আদালতের এ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্ট তাকে খালাস দেন। এর আগে হাইকোর্ট তাকে ওই মামলায় জামিনও দেন।
কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে আপিলে যায় দুদক। আপিল বিভাগ গত ১৪ জুন খালাসের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে পুনরায় শুনানির আদেশ দেন।
এরপর মায়ার মন্ত্রিপদ থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। দুদকের আইনজীবীর মতে, মায়া আর মন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। তবে মন্ত্রী পদে কোনো বাধা দেখছেন না তার আইনজীবী। এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত রিট করেন এক আইনজীবী। অবশেষে হাইকোর্ট রিটটি খারিজ করে দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
ইএস/এএসআর