ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানি বলেন আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ।
তিনি বলেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক করতে চায় তারা পাকিস্তানি।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তোফায়েল বলেন, পাকিস্তান বলেছে যুদ্ধারাধীদের বিচার করা ঠিক হচ্ছে না। খালেদা জিয়াও তাই বলেছেন। খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, এই প্রশ্ন পাকিস্তানেরও।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি। তিনি বলেন, বাচ্চা (সন্তান) জম্মের পর যিনি আজান দেন, তিনি দাবি করতে পারেন না ওই বাচ্চা তার। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি। আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী হতে বলেছিলেন। তিনি তার প্রত্যাখান করে বলেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, বাংলার মানুষের অধিকার চাই।
তিনি খালেদা জিয়াকে ইতিহাস পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনি সিদ্দিক সালেহের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইটি পড়েন।
স্মরণ সভায় আব্দুর রাজ্জাকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজ্জাক ভাই কথা বলতে গেলে একদিনে শেষ করা যাবে না। রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকলেও রাজ্জাক ভাই ছিলেন সব দলের কাছে জনপ্রিয়। মৃত্যুর আগে আমি অসুস্থ রাজ্জাক ভাইকে লন্ডনে দেখতে যাই। আমার বিদায়ের সময় তিনি হাত ধরে বলেছিলেন, আচ্ছা তোফায়েল বল আমি কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে পারবো না। তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে এক চুলও বিচ্যুত হননি।
আওয়ামী লীগের উপদ্ষ্টো পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আব্দুর রাজ্জাকের শুন্যতা অনেক দিন পূরণ হবে না। শেখ হাসিনা আজ যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার সঙ্গে যদি আব্দুর রাজ্জাক থাকতেন তাহলে দেশ কোথায় যেতো কল্পনা করা যায় না। আব্দুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুর মতো সব দলের নেতা ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আজ যখন নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হচ্ছে তখন খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা তত্ত্ব নিয়ে আসছেন। আসলে পাকিস্তান বলেছেন তাই খালেদা জিয়া বলেছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধের একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও আব্দুর রাজ্জাক সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, পাকিস্তান এখনও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চায়। খালেদা জিয়া শহীদদের নিয়ে যে কটাক্ষ করেছেন তার জন্য জাতির কাছে তাকে ক্ষমতা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তিনি এদেশে রাজনীতি করতে পারবেন না। তার রাজনীতি করার অধিকার নেই।
অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএনম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, ছাত্র লীগের সভাপতি সাইফুজ্জামান সোহাগ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এসকে/এসএইচ