ঢাকা: বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকলে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। তিনি এও বলেন, বিচার বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে কখনও দলীয়করণ হতে পারে না।
শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাইঞ্জে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কাযর্কারিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে করণীয়’ শীষর্ক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত বৈঠকে ড. কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশন হলো অ্যাম্পায়ার, তারা যদি নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে কীভাবে।
বিচারকদের নৈতিকতা, সত্যবাদিতা ও ন্যায়বোধ না থাকলে যত আইনই থাকুক না কেন তাতে কোনো কাজ হবে না,বলেন এই প্রবীণ আইনজীবী।
বিচরকরা কোন যোগ্যতায় নিয়োগ হলো- তা জনগণের জানার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করে ড. কামাল বলেন, আমরা সেই যোগ্যতা দেখতে চাই। যোগ্য লোক নিজের দলের হলেও আপত্তি নেই, তবে অযোগ্য লোক কীভাবে নিয়োগ পায়- এটা জানার অধিকার জনগণের আছে। সংবিধান জনগণকে সে অধিকার দিয়েছে।
বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থার সমালোচনা করে ড. কামাল বলেন, বিচার বিভাগ একটি স্তম্ভ, এই স্তম্ভকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকে না।
বিচারপতিদের চায়ের আমন্ত্রণ পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেছেন, আর চা’র দাওয়াত না, আর ডিনার পার্টি না। বিচারপতিরা যদি চায়ের দাওয়াতে যান তাহলে স্বাধীনতা পুরো কাটেল (বাতিল) হয়ে যায়, স্বাধীনতা থাকে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন, আদালত-বিচার বিভাগ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের মাঝে নেতিবাচক হতাশা আছে। প্রধান বিচারপতি নিয়ে বিতর্কের কোনো কারণ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাধারণ মানুষকে বিচার বঞ্চিত করার অধিকার আছে কিনা- এতে বোঝা যায় আমরা গণতান্ত্রিক দেশে আছি কিনা? আমাদের বলা হয় স্বৈরতান্ত্রিক প্রোডাক্ট।
তিনি বলেন, যে সংগঠনগুলো নাগরিকের নিরাপত্তা দেবে, আজ তারাই জনগণকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারছে। এর প্রোটেস্ট করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। তা না হলে গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে আছে এবং পড়বে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’র নির্বাহী সদস্য ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে বিচার মানা হয় না, বিচারহীনতা, বিচার বঞ্চনা, আইনের শাসন পাওয়ার অধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, কিছু লোক বিচার করার জন্য বসেই আছেন, ইউনিয়ন পরিষদে যান, দেখবেন গ্রাম্য আদালতের প্রধান ইউপি চেয়ারম্যান। দলীয় লোক হয়ে কীভাবে নিরপেক্ষ বিচার করবেন- প্রশ্ন রেখে তোফায়েল আহমেদ এই কোর্টের থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। থানাতেও রাতের বেলা একজন উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে আদালত বসছে, সেখানে ঘুষের ছড়াছড়ি। যে কারণে এখন আর জমি সংক্রান্ত মামলা কোর্টে না গিয়ে থানায় চলে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আদালতের সমালোচনা করলে আদালত অবমাননা হয়ে যায়, কিন্তু সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একবার আদালতের আদেশ অমান্য করলেন, এবং বললেন আমি আমার কাজ করবো, দেখি আদালত কী করতে পারে। তারপরও তার প্রতি আদালত অবমাননা হলো না! আমরা গঠনমূলক সমালোচনা করলেই অবমাননা হয়ে যায়, তাহলে কী আমরা কথা বলবো না?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এখন কোর্ট দুই ভাগে বিভক্ত। একটি আওয়ামী লীগ, আরেকটি বিএনপি। যদি আইনমন্ত্রী, এমপি বা বিচারপতির সন্তান হওয়া যায়, তাহলে তাদের কাছে ক্লায়েন্টরা যায়। তাহলে আমরা কীভাবে প্র্যাকটিস করবো?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬/আপডেট ১৫৪৪ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এসএম/বিএস