রাবি(রাজশাহী): রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর ৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে সোমবার(০৮ ফেব্রুয়ারি)। অথচ আজও এই বহুলালোচিত মামলার বিচার কার্য শেষ হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রায় ৪ বছর আগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আদালতের পিপি আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। মামলার অবস্থা সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। পুলিশের মাধ্যমে জেনে পরে জানাতে পারবো। ’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম কবির জানান, ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় তার নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তারা তদন্ত কাজ শেষ করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে ঘটনার অনেক লোমহর্ষক তথ্য তারা উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘সেসময় আমি প্রশাসনের কোনো দায়িত্বে ছিলাম না। তাই সেসময়ের সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হইছে কিনা, জানি না। আর আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর সিন্ডিকেট সভাতে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আমি বিষয়টি দেখছি। ’
বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, হল দখলকে কেন্দ্র করে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় শিবির ক্যাডাররা। এতে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন নিহত হন।
ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু বাদী হয়ে শিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও অনেক শিবির নেতাকর্মীর নামে নগরীর মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর ২০১২ সালের ২৮ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান আদালতে ১২৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমান, রাবি ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, সেক্রেটারি মোবারক হোসেন, নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসমত আলী, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সভাপতি রাইজুল ইসলাম, শিবিরকর্মী রুহুল আমিন ও বাপ্পীসহ ১১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
পরে এ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে জামায়াত নেতা মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একই অপরাধে নিজামীকেও মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে সাঈদী। তবে, অভিযুক্ত শিবির নেতাকর্মীদের অধিকাংশই জামিনে রয়েছে। বাকিরা পলাতক।
সোমবার শহীদ ফারুক হোসনে দিবস স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৮টায় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করবেন নেতাকর্মীরা। পরে ১১টায় দলীয় টেন্ট থেকে শোক র্যালি এবং দুপুর ১২টায় আলোচনা সভা ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিকেলে দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
পিসি