ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না। আসছে না কোনো সংশোধনীও।
এদিকে সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজ এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। গঠন করা হয়নি প্রস্তুতি কমিটিও। চলতি ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হতে পারে। এই সময়ই গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি গঠন করা হবে।
আগামী ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৯ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহি সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্মেলনের এখনও অনেক সময় বাকী থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতির কাজ এখনও শুরু হয়নি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রের সংশোধন বা সংযোজনের বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া এবারের সম্মেলনে গঠনতন্ত্রে মৌলিক কোনো পরিবর্তনও আসছে না বলে তারা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন বা সংযোজন কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত থাকেন তদের একজন নূহ-উল-আলম লেনিন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও দলের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এবার তেমন কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। বাস্তবতার নিরিখে কিছু সংযোজন আসতে পারে।
এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাংগঠনিক বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কিছু সংযোজন আসতে পারে। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়েও কিছু সংযোজন থাকবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার আইন প্রণয়নের ফলে এবার থেকেই এই নির্বাচন দলীয়ভাবে এবং দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য সংসদীয় বোর্ড নামে একটি ফোরাম রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কিছু বলা নেই। তবে সম্মেলনের আগে নির্বাচন চলে আসায় স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন বোর্ড গঠন করে পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হবে বলে জানা গেছে।
দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সুবিধার জন্য সাধারণ সম্পাদকের সমমর্যাদায় দলে একজন মুখপাত্রের পদ সৃষ্টি হতে পারে। এই মুখপাত্র যাতে দলের হয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখা হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে মুখপাত্রের পদ সৃষ্টি করে গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হবে।
এছাড়া আগামী সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে(কার্যনির্বাহি সংসদে) আরও নতুন কিছু পদও সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে সাত বিভাগে এক জন করে সাত জন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রয়েছে। ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লা নতুন তিনটি বিভাগ ঘোষণা হয়েছে। এই তিন বিভাগে আরও তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বৃদ্ধি করে ১০ করা হবে। এ পদগুলোও গঠনতন্ত্রে সংযোজন হবে।
তথ্য-প্রযুক্তি (আইসিটি) পদ নামে নতুন একটি পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দলকেও তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করতে আইসিটি পদ সৃষ্টির চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারসহ আরও কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি হতে পারে। কিছু সম্পাদকীয় পদ ভেঙে আলাদা করার কথা শোনা যাচ্ছে। এগুলো হলো- প্রচার ও প্রকাশনা, শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি ও সমবায় পদ। এই সব পদে দুইটি করে বিভাগ যুক্ত রয়েছে। এগুলো ভেঙে দুইটি করে আলাদা পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। এ পদগুলো গঠনতন্ত্রে আলাদা আলাদা নামে সংযুক্ত হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলার সংখ্যাও বাড়তে পারে। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এই দুই শহরকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়েছে। নতুন তিন বিভাগ ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগীয় মহানগরের মর্যাদা পাবে। এই পাঁচ মহানগরের আলাদা কমিটি হলে সেগুলো সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পাবে। এর ফলে বর্তমান ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা বেড়ে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলায় উন্নীত হতে পারে। এ বিষয়গুলোও গঠনতন্ত্রে সংযোজন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এসকে/জেডএম