ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর মামলার রায়ের ‘খসড়া’ ফাঁস মামলায় তার স্ত্রী-পুত্র-আইনজীবীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
আগামী ২৮ মার্চ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ধার্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে সাকার ম্যানেজার একেএম মাহবুবুল হাসানকে জামিন দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম শামসুল আলম এ চার্জ গঠন করেন।
আসামিরা হলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সাকার আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম ফখরুল ইসলাম, সাকার ম্যানেজার একেএম মাহবুবুল হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী (সাঁটলিপিকার) ফারুক হোসেন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন আলী এবং ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী হাসান।
সকল আসামির উপস্থিতিতে এ চার্জ গঠন করা হয়। এ সময় তাদের করা মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে দেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী (সাঁটলিপিকার) ফারুক হোসেন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন আলী কারাগারে আটক আছেন। ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী হাসান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন।
২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট ডিবির পরিদর্শক মো. শাহজাহান ৭ আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ০১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায়ের আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা ‘রায়ের খসড়া কপি’ সংবাদকর্মীদের দেখান।
পরদিন ০২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় জিডি করেন। এতে ট্রাইব্যুনালের ফারুক ও নয়ন এবং ব্যারিস্টার ফখরুলের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদীকে আসামি করা হয়েছিল। ০৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
মামলায় বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের দিন রায় ঘোষণার আগেই রায়ের কপি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যে, ‘রায়ের কপি’ ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা রায় ঘোষণার আগেই পেয়েছেন। তারা রায়ের স্পাইরাল বাইন্ডিং কপি মিডিয়ায় প্রদর্শন করেন এবং সেটি নিয়েই তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করেন।
চার্জশিটে বলা হয়, মিডিয়ায় ‘রায়ের খসড়া’ প্রকাশিত হলে পরিচ্ছন্নকর্মী নয়ন আলী মেহেদী হাসানের চেম্বারে গিয়ে রায় কিভাবে ফাঁস হলো জানতে চান। মেহেদী হাসান তাকে জানান, রায়ের কপি তার কাছ থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার নিয়ে গেছে। তারাই অনলাইনে এ রায় ফাঁস করেন। মেহেদী নয়ন আলীকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
নয়ন আলীর জবানবন্দির ভিত্তিতেই ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুল আহসানকে আসামি ও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশ-বিদেশে বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করতেই কৌশলে রায়ের কপি সংগ্রহ করে তা এমএস ওয়ার্ড থেকে পিডিএফে রুপান্তর করে www.traibunalleaks.be নামক অনলাইনে প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এমআই/এএসআর