ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

রাজনীতি

রিজভী বলে কথা!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৬
রিজভী বলে কথা!

ঢাকা: খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পর এই মুহূর্তে বিএনপির সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা কে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে দলটির নেতা-কর্মীদের এখন খুব বেশি ভাবতে হচ্ছে না, সবাই এক বাক্যে স্বীকার করছেন ‘রিজভী’!

দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পর প্রোটকলের দিক থেকে যদিও মহাসচিব পদটিই বিএনপির সবচেয়ে বড় পদ। তারপরও দলে দোর্দণ্ড প্রতাপ ও প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীই এখন বিএনপির ‘থার্ডম্যান’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

ষষ্ঠ কাউন্সিলের আগে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নেন- বিএনপিতে এক নেতার এক পদ থাকবে। একাধিক পদ কেউ ধারণ করতে পারবেন না।  

কারো কারো ঘোর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও দলে বেশি সংখ্যক নেতাকে সুযোগ করে দিতে বিএনপির চেয়ারপারসন এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। তার এই সিদ্ধান্ত অনেকেরই তখন ভালো লাগেনি। কেউ কেউ প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন এ সিদ্ধান্তের।  

তবে দলীয় প্রধানের এই সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ও কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ ছেড়ে দেন।

দলের যুগ্ম মহাসচিব হবার পর সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ছেড়ে দেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতির পদ। দলের যুব বিষয়ক সম্পাদকের পদও ছেড়ে দেন তিনি।

কিন্তু গত শনিবার (০৬ আগস্ট) বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর দেখা যায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে বহাল থাকার পরও রিজভীকে দলের দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে। বিষয়টি দেখে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিস্মিত হন।  

দলীয় পরিমণ্ডলে প্রশ্ন ওঠে, কেবল রিজভীর জন্য কি নিজের সিদ্ধান্ত ও অবস্থান থেকে সরে এলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া? নাকি তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে গুরুত্বপূর্ণ পদ দু’টি হাতিয়ে নিয়েছেন রিজভী?

বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা কাঙ্ক্ষিত পদ না পেলেও রিজভী একাই গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদ ধরে রাখবেন- বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না কেউ।  

তারা বলছেন, এতে করে একদিকে দলের চেয়ারপারসন যেমন নিজের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও যেমন দলের চেয়ারপারসনের। আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের এখতিয়ারও তার আছে। তবে যেটি দৃষ্টিকটু বা প্রশ্নবিদ্ধ সেটি না করাই উচিৎ।  

এদিকে রিজভীকে দু’টি পদে বসানোয় দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন হয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, এক নেতার এক পদ ষষ্ঠ কাউন্সিলের অন্যতম সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করা গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনেরই নামান্তর।  

বিএনপি নিয়ে কাজ করেন এমন একজন বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, গঠনতন্ত্র বড় কথা নয়। খালেদা জিয়া যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা সবার জন্যই প্রযোজ্য। দলের প্রতি অনুগত কোনো নেতাই এই সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না। আবার খালেদা জিয়াও কেবল দু’এক জনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত ভাঙতে পারেন না।
 
এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে ফোনো যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৬
এজেড/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।