ঢাকা: ইতিবাচক রাজনীতিতে ফেরা বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ‘অহেতুক’ আন্দোলনে যাবে না। বরং সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবে দলটি।
সরকারের রাজনৈতিক কৌশোলের কাছে হেরে গত দেড় বছর আন্দোলন কর্মসূচির বাইরে থাকা বিএনপি ২০১৯ পর্যন্ত ‘অহেতুক’ কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেবে না। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন আন্দোলনের সময় মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয় না। উত্তেজনাবশত দু’একটি সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে তারা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী চক্র ব্যাপক সহিংসতার জন্ম দেয়। আর এর দায় এসে বর্তায় বিএনপির ওপরে।
বিগত দিনের আন্দোলনে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হওয়ায় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২০১৯ সাল পর্যন্ত অহেতুক কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করা হবে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান বের করার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন- নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য কোন পন্থাটা অবলম্বন করা প্রয়োজন সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। আলোচনায় না বসে কোনো সমাধান হবে না। আমরা সেই আলোচনার কথাটাই বার বার বলছি।
সূত্রমতে, তত্ত্বাধায়ক ব্যবস্থায় না ফেরার ব্যাপারে সরকারের অনড় অবস্থান এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধীনর আলোকে নির্বাচনে যেতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পরামর্শ-ই বিএনপিকে ‘অহেতুক’ আন্দোলন চিন্তা থেকে সরিয়ে এনেছে। তাদের চিন্তা এখন ৩ শ’ আসনে নির্বাচনের জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করা।
এ জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপরই তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন খালেদা জিয়া। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালের দাবিতে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত টানা পৌনে ৪ বছরের আন্দোলনে তাদের যথেষ্ট শক্তি ক্ষয় হয়েছে। মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জরিমানায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
আন্দোলন করতে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হারিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন বেশিরভাগ নেতা-কর্মী-সমর্থক। সাংগঠনিক শক্তিও আগের জায়গায় নেই। তাই ক্ষয়ে যাওয়া শক্তি পুনরায় ফিরে পেতে ‘অহেতুক’ আন্দোলনে না গিয়ে সামনের দুই বছর সংগঠন গোছানোর দিকে মনোনিবেশ করবেন তারা।
সূত্রমতে, একটা পর্যায় গিয়ে যখন মনে হবে ৩শ’ আসনে নির্বাচন করার মত সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয় হয়েছে, তখন আলোচনায় বসার জন্য সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বিএনপি। এই প্রস্তাবে সাড়া না পেলে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে দিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করবে দলটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সরকারকে করতেই হবে। তবে সরকার সেটা এমনিতে করবে না। তাদের ওপর প্রেসার ক্রিয়েট করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬
আরআই