ঢাকা: শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের পর সরকারের সামনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা। এটি বাস্তবায়নে কৌশলগত কারণে সরকার ধীর গতিতে আগাচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের অবস্থান দৃঢ়। তবে কৌশলগত কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে, কী ধরনের বাস্তবতা মোকাবেলা করতে হতে পারে এর সার্বিক বিষয় সরকার পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের অপরাধের বিচার করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত আইন সংসদে পাস করতে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যে কোনো সময় আইনটি পাশ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও সূত্রগুলো জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, সরকারকে একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করতে হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের অপরাজনীতি মোকাবেলা- এসব কিছু করতে গিয়ে যদি জামায়াত নিষিদ্ধে দেরি হয় তাতে মানুষ এ বিষয়ে সরকারের উপর আস্থাহীনতায় ভুগছে বলে মনে করি না।
এদিকে শীর্ষস্থানীয় যে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে তারা হলেন, জামায়াতের আমির মতিউর রহামন নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
এছাড়াও জামায়াতের সর্বোচ্চ নেতা গোলাম আযমের আজীবন কারাদণ্ড হয়। পরে কারাগারেই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। জামায়াতের আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া আরও তিনজন পলাতক ঘাতক চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান ও বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, যাদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে তারা নানাভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। এদের অর্থনৈতিক ভিত শক্ত। সেই শক্তি দিয়ে পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার চেষ্টাও হয়েছে। এদের রায় কার্যকর সরকারের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ ছিলো। সেই চ্যালেঞ্জ সরকার অতিক্রম করেছে। জামায়াত নিষিদ্ধের চ্যালেঞ্জও সরকার কাটিয়ে উঠবে।
তবে এ বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্টরা সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। বিষয়টি সম্পর্কে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। জামায়াতের বিচার সংক্রান্ত আইনের খসড়া কবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি দেশের বাইরে ছিলাম। সবে ফিরেছি। এখনই কিছু বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা আইনের খসড়াটি দেড় বছর আগে আইনমন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম আযমসহ অন্যান্য নেতাদের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনাল জামায়াতকেও সন্ত্রাসী ও অপরাধী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়। এর পরই সরকার এ উদ্যোগ নেয়।
সেই সঙ্গে ৩ বছর আগে হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে করা জামায়াতের আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
তবে এ অবস্থায় সরকার নির্বাহী আদেশেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা জানান।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এই রায়ের পর জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যায়।
তবে সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে এ বিষয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ