ঢাকা, সোমবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ সফর ১৪৪৬

রাজনীতি

‘নীতি আদর্শহীন লোকদের হাতে জাতীয় পার্টি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
‘নীতি আদর্শহীন লোকদের হাতে জাতীয় পার্টি’

ঢাকা : ফেসবুকে সমালোচনা মুলক পোস্ট দেওয়ায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক পার্টির এক কেন্দ্রীয় নেতাকে। আর এ ঘটনায় জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

যেকোনো মুহুর্তে পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) আহ্বায়ক আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন তার ফেসবুক এক পোস্টে কারো নাম উল্লেখ না করে লিখেছেন, কারো যোগ্যতা প্রমাণের জন্য চৌদ্দ বছর কি যথেষ্ট নয়। কেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধীদল নেতার ‍সাক্ষাৎ হলো না, কেন চীনা রাষ্ট্রপতির সফরকালে জাতীয় পার্টির কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন না। এর দায় কার।

অপর এক পোস্টে লিখেছেন, ‘জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক পতাকা আজকে কাদের হাতে। নীতি আদর্শহীন লোকদের হাতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি তারা হয়তো জানে না রাজনীতির প্রকৃত সংজ্ঞা কি। বর্তমানকালীন জাতীয় পার্টির রাজনীতি হল কিছু মুনাফিক সুবিধাভোগীদের হাতে’।  

‘তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী নেতারা যারা জাতীয় পার্টিতে বিভিন্ন সময় গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং দলের বিপর্যয়, সংকট মোকাবেলা করেছেন দল থেকে তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আত্মকেন্দ্রীক নেতাদের প্রভাবে তারা আত্মসম্মান নিয়ে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ’ 

 ‘জাতীয় পার্টির আদর্শ কে বিসর্জন দিয়ে পা চাটার রাজনীতিতে ব্যস্ত। ’ 

এসব পোস্টে কারো নাম উল্লেখ না করলেও বর্তমান মহাসচিব বিগত টার্মে টানা চৌদ্দ বছর মহাসচিব পদে ছিলেন। এ কারণ ধরে নিয়ে তাকেই উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। আর এতেই বেজাই ক্ষেপেছেন মহাসচিবের ক্যাডারখ্যত যুব সংহতির সদস্য সচিব ফখরুল হাসান শাহাজাদা।  

সুমন নিত্যদিনের মতো ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে আসেন। এ সময় তাকে তৃতীয় তলায় যুব সংহতির কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। সুমন নেতাকর্মীদের কাছে একজন ত্যাগী ও স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে দলে রয়েছেন। সম্প্রতি এরশাদ অসুস্থ হলে ব্যক্তিগত খরচে দোয়া মাহফিলের আয়োজন।  
 
অন্যদিকে, শাহাজাদা সুবিধাবাদী হিসেবে পরিচিত। ২০০১ সালে নাজিউর রহমান ও ফিরোজ রশীদ আলাদা জাতীয় পার্টি (নাফি) গঠন করেন তখন তাদের সঙ্গে জাপা ছেড়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর এরশাদের সুদিন দেখে আবার ফিরেছেন। এ কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা সুমনকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না।  
 
সুমনের এই পোস্টকে অগঠনতান্ত্রিক উল্লেখ করে শোকজ করেছে স্বেচ্ছাসেবক পার্টি। জবাবের জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই জবাবও দিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সুমন।

পার্টি অফিসে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে সুমনের কাছে জানতে চাওয়া হলে বলেন, আমি এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। সময় হলেই সব জানাব। আপনি কি কোন কারণে ভীত? জবাবে বলেন, আমি ভীত এ কথাও বলব না, ভীত নই এ কথাও বলব না।  

মহাসচিবের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত যুব সংহতির সদস্য সচিবের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিনিয়র নেতারা। তারা বলেছেন, পার্টি অফিসের ভেতরে এমন ঘটনা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ রকম ঘটনা পার্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এই নেতারা পার্টিতে শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে শাহাজাদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ‍জানিয়েছেন। এমন কি তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য মহাসচিবের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সিনিয়র নেতারা একাট্টা।

সিনিয়র নেতারা বলছেন, পার্টির মহাসচিব মানে কি সমালোচনার উর্ধ্বে যে তার কোনো সমালোচনা করা যাবে না। ভুল করলে নিশ্চয় তার সমালোচনা করা যাবে। সমালোচনা যদি গঠনতান্ত্রিক না হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গঠনতান্ত্রিক হওয়া উচিত। এমনিতেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা আসা যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর যদি কারো উপর হামলা হয় তাহলে অন্যরা কেন আসবে।  

দলের নিবেদিত প্রাণ না হলেও শুধুমাত্র মহাসচিবের জেলার লোক ও ঘনিষ্ঠ হওয়া সম্প্রতি তাকে এরশাদের ভ্যানগার্ড খ্যাত জাতীয় যুব সংহতির সদস্য সচিব করা হয়েছে শাহাজাদাকে। এ নিয়েও আগে থেকেই অসন্তোষ রয়েছে পার্টির মধ্যে। সেই অসন্তোষে যেন ঘি ঢাললেন শাহাজাদা নিজেই।
 
এ বিষয়ে ফখরুল আহসান শাহাজাদার সঙ্গে কথা হলে তিনি লাঞ্ছিত করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একটা বিষয় ছিল তাকে বুঝাই দিছি। ও যেন এ সব পোস্ট না দেয়। সে বলেছে আর দিবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এসআই/ পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।