বিভিন্ন মহল বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে বোঝার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন ব্যাখা ও মতামত অব্যাহত রয়েছে।
তবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের রাজনৈতিক সহকর্মী ও বিএনপির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা মনে করছেন, তার এ বক্তব্য বাস্তবতার নিরিখে আইনের ব্যাখা। বিশেষ কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে এ বক্তব্য দেননি সাবেক এ আইনমন্ত্রী। বরং দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।
গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় সাজা হয়ে গেলেও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বও দিতে পারবেন’।
কারণ, নিম্ন আদালতে যদি ৩/৫ বছরের সাজা হয়, তাহলে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো এবং তার জামিন চাইবো। আর উচ্চ আদালতে যাওয়া মানেই মামলা চলতে থাকা। মামলা চলা অবস্থায় কাউকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার সুযোগ নেই।
সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শেষ পর্যায়ে এসে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের দেওয়া এমন বক্তব্যে দলের মধ্যে একটা কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা ধরে নেন, চলমান দুই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে যাচ্ছে-এমনটি আভাস পেয়েই ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ওই বক্তব্য দিয়েছেন। এ বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি’ মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন খালেদা।
সঙ্গে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়েছে, মামলায় সাজা হয়ে গেলেও এখনই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে পারবে না সরকার।
গত দুইদিনে মওদুদের এ বক্তব্য নিয়ে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক বা আলোচনার খবর পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত আলোচনা ও আড্ডায় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলেছেন মাত্র!
এদিকে দলের শীর্ষ নেতারা মওদুদের এ বক্তব্যে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছেন। তারা বলছেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাইরে রেখে নির্বাচনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সেই পরিকল্পনা বস্তবায়নের জন্যই বেকসুর খালাস পাওয়া একটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে সাজা পেয়েছেন তারেক রহমান। এখন খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু কেবল নিন্ম আদালতের ‘সাজা’ নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে বাইরে রাখতে পারবে না। কোনো মামলায় যদি সাজা হয়েও যায়, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আপিল করবেন তিনি। এ আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই নির্বাচন চলে আসবে। তখন তাতে অংশ নিতে কোনো বাধা থাকবে না খালেদা জিয়ার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে খালেদা জিয়া সাধারণ কোনো নাগরিক নন। জনগণের ভোটে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। তাকে যদি মিথ্যা মামলায় নিম্ন আদালত সাজা দেন, উচ্চ আদালতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি জামিন পাবেন। তখন আপিল বিভাগে মামলা চলতে থাকবে। এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তার আর কোনো বাধা থাকবে না।
এদিকে বিএনপির আরেকটি অংশ মনে করে, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য হলেও খালেদা জিয়ার ব্যাপারে হার্ডলাইনে যাবেন না শেখ হাসিনা। নিজের ক্ষমতা ঝুঁকিমুক্ত করতেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য আচরণ করবেন তিনি। খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার ইচ্ছা থাকলে ২০১৫ সালে টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা এতো বোকা নন। তিনি কিছুতেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠাবেন না। যোগ্য নেতৃত্ব এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশে তো বটেই বর্হিবিশ্বেও অবস্থান তৈরি করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে সেই অবস্থান নষ্ট করবেন না; নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনবেন না’।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
এজেড/জেডএস