ফলে প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরের মাথায় এসে কঠিন সময় পার করার মুহূর্তে অনেকটা একা হয়ে গেছে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বন্ধু হয়ে যারা পাশে দাঁড়িয়েছিলো, তাদের অনেকেই এখন বিএনপিকে ছেড়ে সরকারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে!
গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে কওমীভিত্তিক আলেমদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গণভবনে যায়।
শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে গণভবনে যাওয়া হেফাজত নেতাদের মধ্যে ছিলেন- নূর হোসাইন কাসেমী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’র মহাসচিব।
ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি এই নূর সোসাইন কাসেমীই ২০১৩ সালে ঢাকায় ‘হেফাজত উন্মাদনা’র অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তার সাংগঠনিক উদ্যোগ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ঢাকার শাপলা চত্বরে ৪ এপ্রিল মহাসমাবেশ ও ৫ মে ‘ঢাকা ঘেরাও’ কর্মসূচি পালন করে হেফাজত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজতের ওই ‘আস্ফালন’ ও ধর্মীও উন্মাদনা’কে ক্ষমতায় যাওয়ার সহজ ‘রাস্তা’ মনে করে তাদেরকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেয় বিএনপি। ৫ মে’র জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের মধ্যে হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু যে নূর হোসাইন কাসেমীর সংগঠন হেফাজতকে রক্ষার জন্য মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিএনপি প্রধান, সেই নূর হোসাইন কাসেমীই ১১ এপ্রিল গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে বক্তব্য দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কওমী মাদ্রাসার সনদকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।
সূত্রমতে, হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপি জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে থাকবে কী থাকবে না, এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। আগামী নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি জোটের এ দু’টি দল।
এর আগে গত বছর ৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যায় জোটের তৃতীয় শক্তিশালী দল ইসলামী ঐক্যজোট। প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনী প্রতিষ্ঠিত এ দলটি এখন সরকারের নেক নজরে আছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া শেখ শওকত হোসেন নীলু নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), প্রয়াত শেখ আনোয়ারুল হক’র নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী, খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) একাংশ, শফিউল আলম প্রধান নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) একাংশ, এইচ এম কামরুজ্জামান খান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলীম লীগের একাংশ অনেক আগেই বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে গেছে।
সূত্রমতে, বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া এসব রজানৈতিক দল এখন সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে মোকাবেলার জন্য এদের নিয়ে স্বতন্ত্র জোট গঠনেরও চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
জানা গেছে, শুধু জোট শরিক নয়, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কিছুটা কাছে আসা সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আব্দুর রব নেতৃত্বাধীন জাসদসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আর আগের জায়াগায় নেই।
রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন প্রোগ্রামে মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীকে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম মাঝে মধ্যে বিএনপি ঘরোনার সংগঠনগুলোর প্রোগ্রামে গেলেও এখন একেবারেই যাচ্ছেন না। আ স ম আব্দুর রব বাইরে থেকে সরকারের সমালোচনা করলেও আসছেন না বিএনপির সংস্পর্শে!
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মূল শক্তি জনগণ। আমরা সেখানেই যাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস যেসব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারা আমাদের সঙ্গেই থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭
এজেড/বিএস