ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘দেশের সম্পদ লুটে কারা আর হেনস্তা করা হয় কাদের?’

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৭
‘দেশের সম্পদ লুটে কারা আর হেনস্তা করা হয় কাদের?’ আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: ‘দেশের কোনো খাতই এখন অবাধ লুটপাট থেকে মুক্ত নয়। ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে ক্ষমতাসীনদের বিদেশে পাচার করা বিপুল অর্থের খবর প্রকাশ পেয়েছে। সুইস ব্যাংকে ক্ষমতাসীনদের টাকা ফুলে ফেঁপে উঠছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে আইটি খাতে বিশাল দুর্নীতি চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত রিজার্ভ থেকে আটশ’ কোটি টাকা কারসাজি করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

‘দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে কারা আর মামলা দিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে কাদেরকে?’- প্রশ্ন তার।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বৃহস্পতিবার (০৯ নভেম্বর) আদালতে এসব কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দুই মামলার বিচার চলছে। অন্যটি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের আসামিপক্ষের পুনঃজেরা অব্যাহত রয়েছে।  

মামলা দু’টির প্রধান আসামি খালেদা জিয়া অরফানেজে চতুর্থ দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। ৩৪২ ধারায় ১ ঘণ্টা ২৩ মিনিট আত্মপক্ষ সমর্থনের পর তার আবেদনে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। চ্যারিটেবলে পুনঃজেরার দিনও একইদিন ধার্য করেন।

বক্তব্যের শুরুতে শাসক দলের ইচ্ছানুসারে তার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া এসব থেকে মুক্ত হয়ে তার প্রতি ন্যায়বিচার করা হবে বলে আদালতের কাছে প্রত্যাশা করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দেশে ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে বিচারের নামে অবিচারের নমুনা আমরা দেখেছি। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একজন প্রভাবশালী নির্মাতা শেখ মুজিবুর রহমান। তাকেও দুর্নীতি মামলায় বিচারের নামে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও অলি আহাদের মতো জাতীয় নেতাদেরকেও কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল’।

‘ ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেন না। যারা নেন, তারা ইতিহাসে সম্মানিত হন। আর যারা শিক্ষা নেন না, তাদের স্থান হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। সময়ের পরিক্রমায় আজকের সময়ও এক সময় ইতিহাস হবে। আলোচ্য মামলাটিও নিশ্চয় ইতিহাসে এক অমূল্য উপকরণ হবে’।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারা আমাকে ও হাসিনাকে মাইনাস করার তৎপরতা শুরু করে। আমাকে গৃহবন্দি করা হয়। বিদেশ সফররত শেখ হাসিনার দেশে ফিরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সে সময় শেখ হাসিনার প্রতি অন্যায় হলে গৃহবন্দি অবস্থায়ই আমি এর প্রতিবাদ করেছিলাম’।

‘প্রতিহিংসার বিপরীতে সংযম সহিংসতা ও সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছি’ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার ও জিয়ার পরিবারের প্রতি শেখ হাসিনার অশোভন উক্তি ও প্রতিহিংসামূলক বৈরি আচরণ সত্ত্বেও আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। আমি তার প্রতি কোনো প্রতিহিংসাপ্রবণ আচরণ করবো না’।

সুন্দর, শোষণমুক্ত ও সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক রাজনীতি গড়ে তাদের কাছ থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন ভালো কিছু শিখতে পারেন, এমন দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়ারও আহবান জানান খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৭
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।